ইতিহাসে বাদ মুঘল অধ্যায়, লাল কেল্লা-তাজমহলকে কি অস্বীকার করা সম্ভব?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মুঘল যুগের ইতিহাসই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। যা ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সিলেবাস থেকে বাদ দিলেও মুঘল যুগের ইতিহাস জানার উৎসাহে কোনওরকম ভাঁটা পড়েনি। বরং আরও বেশি করে ইতিহাস ছুঁয়ে দেখতে লালকেল্লায় হাজির শয়ে শয়ে পর্যটক। ভিড় সংগ্রহালয়েও।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট লালকেল্লায় প্রত্যেক স্থাপত্যের সামনেই খোদাই করা আছে তার বিবরণ। সেখানেই চণ্ডীগড় থেকে আসা এক পর্যটককে প্রশ্ন, স্কুলের সিলেবাস থেকে মুঘল যুগ বাদ পড়ার কথা শুনেছেন? বললেন, ‘কী না থাকলে কী হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করছি না। তবে আমরা যখনই দিল্লি আসি, লালকেল্লায় ঢুকি। দেশের এতবড় ইতিহাসকে অস্বীকার করা যায় নাকি?’
প্রশ্নটা বোধহয় সকলেরই। ‘দেওয়ান-ই-আমে সম্রাট শাহজাহান কি নিজে আমজনতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন?’ ‘এটিই কি সেই বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন?’ ‘শুনেছি আগ্রা ফোর্টে অনুমতি না মেলায় হৃতিক-ঐশ্বর্যার যোধা আকবরের শ্যুটিংয়ের অংশবিশেষ এখানেই হয়েছিল, সত্যি?’ অক্লান্তভাবে পর্যটকদের প্রশ্নবাণ সামলাচ্ছেন গাইডরা। কিছু প্রশ্ন মুঘল যুগকে নিয়ে, কিছু রুপোলি জগত নিয়ে…। কিন্তু দিনের শেষে মুঘল সম্রাটের এহেন স্থাপত্য নিদর্শন আম জনতাকে দু’দণ্ড থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করছে। আদ্যন্ত একটি যুগকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য কার!
সাল ১৬৩৮, মে মাস। মুঘল সম্রাট শাহজাহান ততদিনে স্থির করে ফেলেছেন যে, রাজধানী আগ্রা থেকে সরিয়ে দিল্লিতে নিয়ে আসবেন। নতুন রাজধানী শহরের নামও প্রায় চূড়ান্ত। শাহজানাবাদ। দিল্লিতে দুর্গ-নগরী স্থাপনের কাজ শুরু করলেন মুঘল সম্রাট। লাল বেলেপাথরে দিল্লির ‘রেড ফোর্ট’ কিংবা ‘লালকেল্লা’ তৈরির কাজ শেষ হয় এর প্রায় দশ বছর পর। সাল ১৬৪৮। মাস এপ্রিল। আর ২০২৩-এর এপ্রিলেই ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা সিদ্ধান্ত নেওয়া হল মুঘলদের ইতিহাস তথা লাল কেল্লাকে!
বিগত দু’দশক সরকারি গাইডের কাজ করছেন ডঃ জয়বীর সিং। লাহোরি গেট পেরিয়েই যে ছাত্তা বাজার, সেখানে বসেই সাফ জানালেন, ‘এভাবে কোনওদিনই ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না। স্কুলের সিলেবাসে থাকুক বা না থাকুক, সাধারণ মানুষ এখানে আসবেনই। এবং মুঘল যুগকে চাক্ষুষ করবেন।’ সত্যিই তাই। সংগ্রহালয়ে প্রবেশ করে যখন চোখের সামনে শাহজানাবাদের (বর্তমানের পুরনো দিল্লি) মানচিত্র দেখতে পান দিল্লির প্যাটেল নগরের বাসিন্দা দীপক তলোয়ার, বিস্মিত হন। দেওয়ান-ই-আমের ঠিক উল্টোদিকে নহবতখানায় দাঁড়িয়ে যখন জানা যায় দিনে নিয়ম করে পাঁচবার এখানে নহবত বাজানো হতো কিংবা অতিথি অভ্যাগতরা সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে এলে বেজে উঠত সুর— আজও পা থমকে যায় আম জনতার।
শুধু মুঘল অধ্যায় নয়, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) দ্বাদশ শ্রেনির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইতে গান্ধী হত্যার পর্বও ছেঁটে ফেলেছে। এই ঘটনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষায় গেরুয়াকরণের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যেই নয়া তথ্য সামনে এল। জানা গিয়েছে, ২০২৪ সাল থেকেই মাধ্যমিকের ইতিহাস বইতে জায়গা পেতে চলেছে গ্রিক, মগধের মতো বড় সাম্রাজ্যের উত্থান, ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন দর্শন ও দার্শনিকদের কথা। এছাড়া মধ্যযুগে ভারত ও বিশ্বে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন, ঔপনিবেশিক শক্তির উত্থান ও তাদের নীতির মতো বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে নয়া সিলেবাসে। ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর স্কুল এডুকেশন (এনসিএফ) ২০২৩—এর খসড়ায় এমনই সুপারিশ করা হয়েছে। ইসরোর প্রাক্তন প্রধান কে কস্তুরিরঙ্গণের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি ওই খসড়া রিপোর্ট কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন,ওই খসড়া চূড়ান্ত করা হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই নয়া পাঠক্রম চালু হবে।