বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বোলান গান: চৈত্র মাস ও লৌকিক বঙ্গ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ

April 10, 2023 | 2 min read

বোলান গান, ছবি সৌজন্যে-Sompara/ফেসবুক পেজ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: তারাশঙ্করের গণদেবতায় বোলান গানের উল্লেখ রয়েছে। চৈত্র-সংক্রান্তির সময়ে যাঁরা শিবের পুজো করেন, তাঁদের অর্থাৎ ভক্ত ও সন্ন্যাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য দেবদেবীর মাহাত্ম্য-গান রচিত হয়। ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনীই বোলানের গানে উঠে আসে। পাশাপাশি বোলানের গানে উঠে আসে সামাজিক, দৈনন্দিন কাহিনী। আগে অভিনেতারা পায়ে হেঁটে বা সাইকেল ও গরুর গাড়িতে চেপেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে বোলানের গান গাইত, এখন তারা গাড়ি ব্যবহার করছেন। একদা পুরুষরাই নারী সেজে অভিনয় করতেন। এখন মহিলারাও অভিনয় করছেন। বোলান দলও অস্থায়ী কাঠের পাটাতন ও আলোর ব্যবহার করে। চারিদিকে খোলা মঞ্চে, অপেশাদার শিল্পীরা, বোলান পরিবেশন করেন। এর মাধ্যমে লোকশিক্ষা চলে।

এক সময় বোলান গানে নল-দময়ন্তী, শিববন্দনা, গণেশবন্দনা ইত্যাদি উঠে আসত। এখন সামাজিক পালা সে জায়গার দখল নিয়েছে। তরণীসেন বধ, মহিরাবণ বধ, চণ্ডাল হরিশ্চন্দ্রর বদলে ‘বড় ভাই’ ‘বউ কেমন আছ’ ইত্যাদি নামে পালা এসেছে। হারমোনিয়াম, তবলা, খোল,খঞ্জনি, বাঁশির বদলে এসেছে নানান আধুনিক বাদ্যযন্ত্র। রাঢ়ভূমিই বোলান গানের আদিভূমি। বোল বা ডাক দেবীকে আহ্বান থেকেই বোলান নামের জন্ম। কেউ কেউ বলেন বুলান, ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে বেড়ানো হয় বলে, বোলান শব্দের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে। গাজন সন্ন্যাসীদের প্রধানকে ‘বালা’ বলে অভিহিত করা হয়, তাই তাঁদের উদ্দেশ্যে গাওয়া গানকেও বোলান গান বলা হয়ে থাকে। বোলানের দল সেই পালা গ্রামে গ্রামে ঘুরে পরিবেশিত করে। পালার প্রথমে থাকে শিবের বন্দনা ও শেষে পালাকর্তার নাম। বোলান গান মূলত চার প্রকার, দাঁড় বোলান, পালা বোলান, সখী বোলান আর শ্মশান বোলান। আগের মতো গ্রামে গ্রামে আর বোলান দেখা যায় না। তবে বীরভূম, বাঁকুড়া, নদীয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় এখনও চৈত্রের শেষে বোলান শিল্পীদের দেখা মেলে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Chaitra, #Bolan Song, #Bengali culture, #West Bengal

আরো দেখুন