বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

চৈত্র সংক্রান্তির কলকাতার সেকাল ও একাল

April 12, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গাজন ও চড়ক গ্রাম্য সংস্কৃতির অঙ্গ। তথাকথিত অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষজনের উৎসব কলকাতার উৎসব হয়ে উঠেছিল, আঠারো-উনিশ শতকে। বিংশ শতকে এসে তা ধাক্কা খায়। নিষিদ্ধ হয় সঙ, দায় চাপানো হয় অশ্লীলতার। কুৎসিত অঙ্গভঙ্গির দায়ে সন্ন্যাসীদের গ্রেপ্তারও করেছে সে সময়ের ব্রিটিশ প্রশাসন। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা শুরু হল কীভাবে?

গ্রামের মানুষ জীবিকার সন্ধানে শহরে এল। পেশা ভিত্তিক পাড়া তৈরি হল। সেই সঙ্গে তাদের উৎসবও এল। শিব-দুর্গার সঙকে কলকাতার বাবু শ্রেণী গ্রাস করল। নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করল তারা। সঙ লাভ করল অভিজাত শ্রেণীর বদান্যতা। ক্রমেই তা বদলে গেল প্রতিবাদের ভাষায়। সঙ আজ লুপ্ত।

তবে চড়ক পুজো আজও চলে কলকাতায়। মেলা বসে। আজও চড়কের মেলা বসে বিডন স্ট্রিটের ছাতুবাবুর বাজারে। ছাতুবাবুর বাজারের মেলাটি আজও কলকাতার সবচেয়ে বড় চড়কের মেলা। চৈত্র সংক্রান্তির দিন বিকেলে সেখানে মানুষের ঢল নামে। আজও পুরনো ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে বিডন স্ট্রিট। ঘর-গৃহস্থলি দৈনন্দিন জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর শৌখিন সামগ্রীর দেখা মেলে সেখানে। বঁটি, দা, ছুরি থেকে শুরু করে কাঠের নানা জিনিসের সম্ভার সেখানে। চৈত্র সংক্রান্তির বিকেল থেকে সারা রাত অতিক্রম করে পরদিন দুপুর পর্যন্ত মেলা চলে।

কলকাতার চৈত্র সংক্রান্তি, ছবি সৌজন্যে- আনন্দবাজার

হুতোম লিখে গিয়েছেন, ‘রাস্তায় লোকারণ্য, চারদিকে ঢাকের বাদ্যি, ধুনোর ধোঁ, আর মদের দুর্গন্ধ। সন্ন্যাসীরা বাণ, দশলকি, সূতোশোন, সাপ, ছিপ, ও বাঁশ ফুঁড়ে একবারে মরিয়া হয়ে নাচ্‌তে নাচ্‌তে কালীঘাট থেকে আস্‌চে।…চড়কগাছ পুকুর থেকে তুলে মোচ বেন্ধে মাথায় ঘি কলা দিয়ে খাড়া করা হয়েচে। ক্রমে রোদ্দুরের তেজ পড়ে এলে চড়কতলা লোকারণ্য হয়ে উঠল।…এদিকে চড়কতলায় টিনের ঘুরঘুরি, টিনের মুহুরি দেওয়া তল্‌তা বাঁশের বাঁশি, হলদে রং করা বাঁখারির চড়কগাছ, ছেঁড়া নেকড়ার তৈরি গুরিয়া পুতুল, শোলার নানা প্রকার খেলনা, পেল্লাদে পুতুল, চিত্তির করা হাঁড়ি বিক্রি করতে বসেচে…। এক জন চড়কী পিঠে কাঁটা ফুঁড়ে নাচ্‌তে নাচ্‌তে এসে চড়কগাছের সঙ্গে কোলাকুলি কল্লে— মইয়ে করে তাকে উপরে তুলে পাক দেওয়া হতে লাগলো। সকলেই আকাশ পানে চড়কীর পিঠের দিকে চেয়ে রইলেন। চড়কী প্রাণপণে দড়ি ধরে কখনও ছেড়ে, পা নড়ে ঘুরতে লাগ্‌লো। কেবল ‘‘দে পাক দে পাক’’ শব্দ। কারু সর্ব্বনাশ, কারু পৌষ মাস! একজনের পিঠ ফুঁড়ে ঘোরান হচ্চে, হাজার লোক মজা দেখচেন।’

সঙ দেখতে চিৎপুর রোডসহ অন্যান্য রাস্তা লোকে লোকারণ্য থাকত। চড়ক উপলক্ষ্যে সেকালের কালীঘাট অঞ্চলে শোভাযাত্রা বেরতো। সাহেবরা সে সব লিখেও গিয়েছেন, চড়কের শোভাযাত্রায় সন্ন্যাসীদের বীভৎস সব ক্রিয়াকলাপ দেখা যেত। সন্ন্যাসীরা সকালে কালীঘাটে গিয়ে নিজেদের গায়ে বাণ বিঁধিয়ে আসতেন। কলকাতার পথে হাজার হাজার সন্ন্যাসীর দেখা মিলত। পরনে কৌপিন, সারা গায়ে সিঁদুরের দাগ, গলায় জবার মালা, চড়কের বীভৎসতা দেখে সাহেবরাও অবাক হতেন। মোটা বড়শিতে নিজের শরীর বিদ্ধ করে চড়ক কাছে ঘোরা, বাণ ফোঁড়া, বঁটি ঝাঁপ এবং কাঁটা ঝাঁপ ইত্যাদি খেলায় মাততেন সন্ন্যাসীরা। যদিও কালের নিয়মেই এই অমানুষিক প্রথা বন্ধের মুখে। তবুও কলকাতার কিছু কিছু জায়গায় আজও ঝাঁপ, লাফ চলে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Chaitra Sankranti, #West Bengal, #Kolkata

আরো দেখুন