গুজরাত দাঙ্গা: প্রাক্তন মন্ত্রী মায়া কোদনানি, বাবু বজরঙ্গিদের নিশর্ত মুক্তি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ‘আমরা একটি মুসলমানের দোকানও ছাড়িনি, আমরা সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছি… আমরা কুপিয়েছি, পুড়িয়েছি, আগুন দিয়েছি… আমার শুধু একটাই শেষ ইচ্ছা আছে… আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক… আমার ফাঁসি হলে আমার কিছু যায় আসে না… আমায় কেবল ফাঁসির আগে দু’দিন সময় দিন এবং আমি জুহাপুরায় যেতে চাই, যেখানে সাত বা আট লাখ ওই ধর্মের লোক থাকে… আমি তাদের শেষ করব… তাদের আরও কয়েকজনকে মরতে দিন… অন্তত ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ মরতে হবে।’ এই ভয়ঙ্কর বক্তব্য বজরঙ দলের নেতা বাবু বজরঙ্গির। ২০০৭ সালে ‘তেহেলকা’য় প্রকাশিত হয়েছিল গোপন ক্যামেরায় নেওয়া তাঁর এই সাক্ষাৎকার। যেখানে তিনি নারোদা গামে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কীভাবে আক্রমণ চালিয়েছিলেন, তা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং তার জন্য গর্ববোধও করেছিলেন!
এবার ২০০২ গুজরাট গণহত্যার ঘটনায় নারোদা গাম মামলায় নিশর্ত মুক্তি পেলেন বিজেপি নেত্রী ও প্রাক্তন মন্ত্রী মায়া কোদনানি ও বজরঙ দলের নেতা বাবু বজরঙ্গি। শুধু এই বিজেপি নেত্রীকেই নয় এই মামলায় অভিযুক্ত ৬৮ জনকেই মুক্তি দিয়েছে আমদাবাদের বিশেষ আদালত।
যা নিয়ে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ওরকম ঘৃণ্য ঘটনার পরও কীভাবে মূল অভিযুক্তরা নিশর্ত মুক্তি পেতে পারে? বিরোধীদের বক্তব্য গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেমন বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছিল গুজরাট সরকার। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ৬৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হল। লক্ষ্য একাটাই রাজনৈতিক মেরুকরণ।
২০০২ সালে গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালের এই মামলায় ১১ জন মুসলিমকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার পর শুরু হয় মামলাটি। ২০০২ সালে গুজরাতের মন্ত্রী ছিলেন মায়া। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী। সেই সময় সাবরমতী এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হিংসার ঘটনা ঘটে।
২০০২ সালে আমদাবাদের নারোদা গামে ১১ জন মুসলিম ধর্মাবলম্বীকে পুড়িয়ে মারায় অভিযুক্ত ছিলেন মায়া কোদনানি। ২০১৭ সালে এই মামলাতেই মায়ার সাক্ষী হিসাবে আদালতে হাজির হয়েছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
২০০২’তে গোধরাতে সবরমতি এক্সপ্রেসের একটি কোচে আগুন লেগে যায়। ঘটনাচক্রে ওই কোচে যারা ছিলেন তাদের প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়। তারপর গুজরাট জুড়ে তীব্র আকার নেয় সাম্প্রদায়িক হিংসা। মৃত্যু হয় বহু মানুষের। যাদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের। আমদাবাদের নারোদাগাম পাটিয়াতেও সাম্প্রদায়িক আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। তাতে ১১ জনের মৃত্যু হয় তারা প্রত্যেকেই মুসলিম। এমনকি হত্যার পরে তাদের বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ৯৭ জনকে দোষি সাব্যস্ত করেছিল ও তাদের ২৮ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল আদালত।
মায়া অবশ্য গুজরাত হিংসার ঘটনায় জেলও খেটেছেন। নারোদা পাটিয়া মামলায়, যেখানে ৯৭ জনকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছিল, তাতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ২৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। পরে অবশ্য গুজরাত হাই কোর্ট থেকে তিনি মুক্তি পান। এ বার নারোদা গাম মামলাতেও খালাস হয়ে গেলেন।
উল্লেখ্য বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার। গোধরার উপসংশোধনাগারে গত ১৫ বছর ধরে বন্দি ছিল সকলে। গত ১৫ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে তারা। ২০০৮ সালে তাদের সকলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জেল থেকে বেরোনোর পরেই এগারোজন দোষীকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মালা পরিয়ে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই ছবি। যা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে।