দেশ বিভাগে ফিরে যান

জনসংখ্যায় প্রথম ভারত, এই বিপুল জনসংখ্যার চাপ সামলাতে কতটা প্রস্তুত আমরা?

April 22, 2023 | 2 min read

ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, ছবি সৌজন্যে-Bloomberg

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব জনসংখ্যার ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চলতি বছরের মধ্যভাগে চীনকে টপকাতে যেতে চলেছে ভারত। এপ্রিল মাসেই ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। চীনের হবে ১৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ। এই হিসেবের মধ্যে অবশ্য চীনের দুই বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা হঙকঙ, ম্যাকাওয়ের জনসংখ্যা ধরা নেই। তাইওয়ানও নেই।

ভারতের জনসংখ্যা এখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার জনসংখ্যার থেকে বেশি। হিসেব করে বোঝা যাচ্ছে, ২০৫০ সালে ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬৬কোটি ৮০ লক্ষ।

এই বিশাল জনসংখ্যা ও সম্ভাব্য শ্রমশক্তির কারণে ভারত চীনের দ্বিতীয় বিকল্প হতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, কর্মক্ষম যুবসমাজকে কাজে লাগাতে প্রতিবছর লাখ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে ভারতকে। কিন্তু ভারত এখনই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারছে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে তাকে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। ভারত যদি এই পথে দ্রুত না এগোতে পারে তাহলে বেকারত্ব ভয়াবহ অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রয়েছে। তবে উপযুক্ত কর্মসংস্থান ছাড়া বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কয়েক দশক ধরে ভারত জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালিয়েছে। ১৯৯০–এর দশকে উদারীকরণের পর ভারতীয় অর্থনীতি বিষয়ে নীতিনির্ধারকেরা কৌশল বদলেছেন। সে সময় নয়াদিল্লি বলেছে, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী ভারতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ভারতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১১০ কোটি। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ কর্মক্ষম। চীনের জনসংখ্যা ৬০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত বছর কমেছে। দেশটির অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ১৯৭৮ সাল থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ ছিল। তবে এখন এই বৃদ্ধি কমে এসেছে। ২০২২ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর মাত্র ৫ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও পশ্চিমি বিশ্বের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির খোঁজ করছেন।

নীতিনির্ধারকেরা অবশ্য ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে জনশক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই জনসংখ্যাকে জনশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারতে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল ২০১৭-১৮ সালে। সে বছর বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ। ২০১১-১২ সালের তুলনায় এই হার ২.৭ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ সালে বেকারত্বের হার ৪.১ শতাংশ হয়েছে।

তবে অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষা বলছে, ভারতে কর্মহীন লোকের সংখ্যা আরও বেশি। সিএমআইই বলছে, গত মার্চে ভারতের বেকারত্বের হার ৭.৮ শতাংশ ছিল। এমনকি নগরেও ৮.৫ শতাংশের বেশি ছিল বেকারত্বের হার।

সরকারি হিসাব বলছে, ভারতে প্রতিবছর শ্রমশক্তিতে ৫০ লাখ শ্রমিক ঢোকেন। জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিমাংশু বলেন, ভারতের অর্থনীতিতে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেকারত্ব। গত দুই দশকে ভারতের অর্থনীতির উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, উৎপাদনশীল কাজে তরুণতর অংশকে যুক্ত করার সক্ষমতা ভারতের অর্থনীতির রয়েছে, এমন কোনো সূচক দেখা যাচ্ছে না। উলটে কোভিড মহামারীর সময়ে অনুমিত ৪ কোটি লোকের কাজ খোয়া গেছে। যাঁদের বড় অংশই পরিযায়ী, তাঁরা গ্রামে ফিরে গেছেন। কিন্তু কৃষিতে না আছে কাজ, না কৃষি থেকে আয়ের বৃদ্ধি। এতদসত্ত্বেও ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বদলে কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়ছে— যা কোনোভাবেই অর্থনীতির পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ভারতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গড়ে ১০.৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তা, রেল যোগাযোগ, ব্যবসা ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রকে দায়ী করা হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #population, #populous country

আরো দেখুন