বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

স্মরণে সত্যজিৎ, আজকের দিনে চলে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার

April 23, 2023 | 2 min read

শ্রদ্ধায় স্মরণে সত্যজিৎ রায়

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ থেকে ৩১ বছর আগে, আজকের দিনেই বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ভারত তথা বাংলা ‘মানিক হারা’ হয়েছিল। সত্যজিতের মৃত্যু ভারতকে, তদুপরি বাঙালিকে, নিঃস্ব করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভোগা মানুষটির মৃত্যুর খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু বাঙালির স্মৃতিতে তাজা হয়ে উঠেছিল ১৯৪১ সালের বৃষ্টি ভেজা শ্রাবণের ছবি, সেদিন জোড়াসাঁকোর এক বাড়িতে নিভে গিয়েছিল এমনই এক প্রদীপ।

১৯৯২-এ তখন স্মার্টফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেট, এফএম রেডিও ছিল না। সরকারি চ্যানেলই ভরসা। পরদিন বিশ্ববরেণ্য মানুষটির মরদেহ রাখা হল নন্দনে, সারা কলকাতা ভেঙে পড়েছিল তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। সত্যজিতের প্রতি মানুষ, তাদের শ্রদ্ধা অর্পণ করেছিল। মহামানবের মহাপ্রয়াণকে কলমের জোরে তুলে ধরেছিল ভারতের প্রতিটি প্রধান সংবাদপত্র।

সত্যজিৎকে স্মরণ করে লেখা হয়েছিল একাধিক সম্পাদকীয়।

‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ গোষ্ঠীর দৈনিক ‘ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস’ ২৫ এপ্রিল ১৯৯২ তারিখে প্রকাশ করে ‘The end of a phase’ শীর্ষক এক সম্পাদকীয়, লেখা হয় সত্যজিৎ ছায়াছবির মাধ্যমে যা বলতে চাইতেন, তা বোঝার জন্য বাংলা ভাষা জানার প্রয়োজন নেই। সত্যজিতের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্প হয়ত শেষ হয়ে যাবে না, কিন্তু আগামী দিনে যারা ধ্রুপদী ছবি করবেন, তাঁরা কেউ সত্যজিৎ রায় হবেন না।

অধুনা লুপ্ত বিখ্যাত ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ একটি আবেগঘন সম্পাদকীয় প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘Remembering Ray’। ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ লেখে সত্যজিতের সমতুল্য সমসাময়িক মহীরুহ, কুরোসোওয়া, বার্গম্যান বা ফেলিনির সঙ্গে মূল্যায়িত হয়ে সত্যজিৎ আরও উচ্চতায় পৌঁছানোর এক অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন, যা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবীর সিনেমাকে সমৃৃৃদ্ধ করেছিল।

‘India’s Satyajit Ray’, ছিল তদানিন্তন বোম্বাইয়ের ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার’ সম্পাদকীয়র শীর্ষক। সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুর শূন্যতাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর শূন্যতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। পরিচালনা ছাড়াও চিত্রনাট্য রচনা, আবহ সঙ্গীত ও সম্পাদনার মতো অন্য বিষয়গুলিতে সত্যজিৎ রায়ের অসামান্য প্রতিভার কথা বর্ননা করা হয়। সত্যজিতের ছবিতে “robust touch of authenticity”, যা ভারতীয় সিনেমায় সত্যজিৎ পূর্ববর্তী যুগে ছিল অনুপস্থিত, সে কথাও উল্লেখ করা হয়।

দিল্লি ও লখনউ থেকে প্রকাশিত ‘দ্য পাইওনিয়ার’-এর সম্পাদকীয়র নাম ছিল “A world without Ray”, তারা লেখেন সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যু শুধুমাত্র বাংলা বা ভারতকে রিক্ত করে না, দেশের সীমানা মুছে এই মৃত্যু রিক্ত করে গোটা বিশ্বকে। সত্যজিৎ শুধুমাত্র যে সিনেমার নন, তিনি যে কলম, কালি, রঙ, তুলি ও সংগীতেরও মহাসাধক তার উল্লেখ রয়েছে এই সম্পাদকীয়তে।

চেন্নাই থেকে প্রকাশিত ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার সম্পাদকীয়টি ছিল এক কথায় অসাধারণ। সত্যজিতের মৃত্যুকে এমন একটা সিনেমা যুগের অবসান বলে বর্ণনা করা হয় যা শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়ায় তৈরি হওয়া ছবি জাঁ রেনোয়ার ‘দ্য রুলস অফ দ্য গেম’-এর সঙ্গে। ‘The irresistible appeal of Satyajit ray’ শীর্ষক ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার সম্পাদকীয়ের শেষ অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছিল, “It may not be an exaggeration to say that nobody else in our country has been able to weave this kind of magic on the screen and so consistently too”।

“Satyajit Ray” শিরোনামে ২৪ এপ্রিল ‘দ্য স্টেটসম্যান’-এ সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছিল। স্টেটসম্যান লেখে, “Coloured visions and a preponderance of political or perhaps petty calculations might have kept Bharatratna from him”, আরও লেখা হয় “the genius had risen well above it all”।

২৪ এপ্রিলের ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ ‘The Tall Man’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে শ্রদ্ধা জানায়। সত্যজিতের নিজের ভাষায় তিনি ছিলেন “committed to human beings”, তাঁর কোনও ছবির শেষে তাৎক্ষণিক বা স্থায়ী সমাধানের ইঙ্গিত নেই, কিন্তু সত্যজিৎ ভারতীয় সিনেমাকে এক স্বতন্ত্র ধারা জুগিয়েছিলেন। সত্যি সত্যি তিনি ছিলেন tall man, যে উচ্চতাকে ছোঁয়া কার্যত অসাধ্য।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Satyajit Ray, #death anniversary

আরো দেখুন