অমর্ত্য সেনের উপর বিশ্বভারতীর আক্রমণের প্রতিবাদে সরব নাগরিক সমাজ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পৈত্রিক বাড়ি, প্রতীচির জমি বিতর্ক কার্যত চরমে পৌঁছেছে। বিশ্বভারতীর তরফে হুমকির সুরে উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে নোবেলজয়ীকে। এই ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হয়েছে শিক্ষাবিদ মহল। আশ্রমিকরাও ক্ষুব্ধ। অনেকেরই বক্তব্য, শুধুমাত্র জমি নয়, জমির আড়ালে রাজনৈতিক বৈরীতা মেটানো হচ্ছে। মোদী সরকারের সমালোচনা করায় প্রবীণ অর্থনীতিবিদ বহুদিন ধরেই বিজেপির রোষে পড়েছেন। সেই কারণে হেনস্থা করা হচ্ছে বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদকে। অমর্ত্য সেনের উপর এহেন আক্রমণের প্রতিবাদে সরব হল সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি।
গতকাল অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায়, নন্দনে তারা প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছিল। তাদের মতে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নোবেলজয়ীর সঙ্গে অন্যায় এবং অশোভন আচরণ করছে। তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই অন্যায় আচরণের নিন্দা করেন। তাদের দাবি, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত। অধ্যাপক সেনের কাছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষর নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মনে করছেন সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতির সভ্যরা। বৃহত্তর সমাজকেও তারা এই প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিনের প্রতিবাদ সভায় লেখক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৌরিন ভট্টাচার্য বলেন, তাঁর কাছে জমি বিতর্ক নিছক গৌণ বিষয়। যা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। আসল বিষয়টি রাজনৈতিক। জমি বিতর্কের আড়ালে অধ্যাপক সেনের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জমি বিরোধ নিছক একটি অজুহাত মাত্র। বিরুদ্ধ কণ্ঠের প্রতি দেশের ক্ষমতাসীন শক্তির অসহিষ্ণুতাই প্রতিভাত হচ্ছে এই ঘটনায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অমিয় দেব বলেন, বিশ্বভারতীর আচার্য হলেন দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলির পরেও তিনি যে নীরবতা বজায় রেখেছেন, তা অবাক করে৷
লেখক অনিল আচার্যর মতে, অমর্ত্য সেন আসল লক্ষ্য নন। তিনি সাধারণ জনগণের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করার মাধ্যম মাত্র। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তারা (দেশের ক্ষমতাসীন দলকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি) যদি অমর্ত্য সেনের সঙ্গে এমনটা করতে পারেন, তবে ভাবুন তারা সাধারণ দেশবাসীর সঙ্গে কী করতে পারেন।
নাট্য ব্যক্তিত্ব রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং শাসকের এজেন্ডা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিবাদ সভায় নাট্যাভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার এবং গৌতম হালদার উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, বিশ্বভারতী যেভাবে অমর্ত্য সেনকে জমি দখলকারী হিসাবে চিত্রিত করেছে, যে ভাষা ব্যবহার করেছে এবং যে পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করেছে তাতে তিনি হতবাক। তাঁর মতে, জমি নয়, বিশ্বভারতীর এই পদক্ষেপ স্বাধীন চিন্তার ওপর আক্রমণ।