সুনীলের ধার মেটানোর উপন্যাস হয়ে উঠেছিল মানিকের মাস্টারপিস!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার প্রবাদপ্রতিম পরিচালকেরা সিনেমা বানানোর জন্য বারবার বেছে নিয়েছেন নীললোহিতের সাহিত্যকে।প্রথম জীবনের সুনীল ছিলেন বোহেমিয়ান, অভাব তো সঙ্গী ছিলই। নিজেই কৃত্তিবাস পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। কৃত্তিবাস তখনও আজকের মতো মহীরুহ হয়নি। প্রতিটা লিটিল ম্যাগাজিনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে লড়াইয়ের নিয়ে!
সুনীল, জলসা পত্রিকার প্রেস কৃত্তিবাস ছাপাতেন। জলসা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ক্ষিতিশ সরকার। তাঁদের প্রেস থেকে ধারে কৃত্তিবাস ছাপালেন।কিন্তু ছাপার ঋণ শোধ হল না। ও পথ আর মাড়াতেন না সুনিল। একদিন ঋণের টাকার জন্য সুনীলকে রাস্তায় পাকড়াও করলেন ক্ষিতিশ বাবু। বললেন ধার আর মিটিয়ে কাজ নেই! আপনি আমার পত্রিকার জন্য ফ্রিতে একটা উপন্যাস লিখে দিন, আপনার ঋণ শোধ। সুনিল হাতে জেন চাঁদ পেলেন যেন, ঋণ তো শোধ হবে। ১৯৬৮ সালে কৃত্তিবাস ছাপার ঋণ মেটানোর তাগিদে শারদীয়া জলসা পত্রিকায় প্রকাশিত হল অরণ্যের দিনরাত্রি, এতে সুনীল নিজের জীবনের কাহিনীই বুনলেন। সুনীল, তাঁর বন্ধু শক্তি, ভাষ্কার, শরদ বেড়াতে গিয়েছিলেন ধলভূমগড়ে। সেই কাহিনীই লিখলেন, উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার দু-বছর পরে ১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায় ঐ গল্প নিয়েই ছবি করলেন। নামটাও এক রাখলেন “অরণ্যের দিনরাত্রি”। সিনেমার দাবীতে কাহিনীর কিছুটা পরিবর্তন করে, উপন্যাস থেকে একটি জোরালো সিনেমাবান্ধব প্লট তৈরি করলেন সত্যজিৎ। সিনেম্যাটিক লিবার্টি নিলেন। চিত্রনির্মাতাদের নিতেই হয়।
১৯৭০ সালে কলকাতার প্রিয়া, বসুশ্রীসহ একাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত চলচ্চিত্র অরণ্যের দিনরাত্রি! মুক্তির সাথে সাথেই ছবিটিকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হল। বিতর্ক কারণ, সিনেমার খাতিরে গল্পে যে যে পরিবর্তন এনেছিলেন সত্যজিৎ, তা স্বয়ং লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মোটেও পছন্দ হয়নি। তাঁর মনে হয়েছিল, সত্যজিৎ তাঁর গল্পের মেজাজটাই আমূল বদলে দিয়েছেন। পরবর্তীতে আনন্দলোক পত্রিকার সত্যজিৎ সংখ্যায় (মে,১৯৯২) সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিচারণায় সুনীল বলেছিলেন, ‘নির্লিপ্তভাবে এ ছবি দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি নিজে এবং আমার কয়েকজন বন্ধু এই উপন্যাসের আসল চরিত্র।’এমন কিন্তু সত্যজিতের আরেকটি ছবিতেও হয়েছিল। চিড়িয়াখানায় সত্যিজিৎ উত্তম কুমারকে চশমা পরিয়েছিলেন। চশমা পরা ব্যোমকেশ দেখে স্রষ্টা শরদিন্দুর বেশ গোসা হয়েছিল। স্বাভাবিক স্রষ্টা একটু খুঁতখুঁতে হবেনই। মোটাসোটা ফেলু মানে শশী কাপুরকে দেখে হয়ত এক সময় সত্যজিতেরও পছন্দ হয়নি।