শততম ‘মন কি বাত’-এর উপলব্ধি: ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়ার’ মতো এখন ‘মোদী ইজ ইন্ডিয়া’!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শুরু করেছিলেন রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’। ধীরে ধীরে যা হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর সরকারের প্রচারমঞ্চ। গত রবিবার (৩০ এপ্রিল) সম্প্রচারিত হয় ‘মন কি বাত’এর শততম পর্ব। এই অনুষ্ঠানটি ঘিরে প্রধানমন্ত্রী এতটাই আবেগঘন হয়ে পড়েছিলেন যে, অনুষ্ঠান শুরুর আগে টুইচ করে তিনি বলেন, ‘‘সকলে সকাল ১১টায় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুনবেন। এটা সত্যিই একটা বিশেষ যাত্রা ছিল। আমরা এই অনুষ্ঠানে ভারতের জনগণের সম্মিলিত চেতনা উদযাপন করেছি এবং অনুপ্রেরণামূলক জীবনযাত্রাকে তুলে ধরেছি।’’
কিন্তু বাস্তবে আমরা কী শুনলাম? শততম ‘মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই নতুন ভারত। তিনি যা বলেন, তাঁর সেই ‘মন কি বাত’-ই দেশের কথা। সমষ্টির এই যাত্রাপথের সবটাই কিন্তু হয়ে থাকল প্রধানমন্ত্রীর আত্মপ্রচার। কখনও তিনি দাবি করলেন, তাঁর চালু করা প্রকল্প গণআন্দোলনের রূপ নিয়েছে। আবার কখনও ফোনে কথা বললেন সাধারণ ভারতীয়দের সঙ্গে। হরিয়ানার সুনীল জগলান, জম্মু-কাশ্মীরের মনজুর আহমেদ, মণিপুরের বিজয়শান্তি দেবী এবং গুরুগ্রামের প্রদীপ সাঙ্গওয়ান। নানা জাতি, নানা ধর্ম এবং নানা প্রান্তের নিপুণ মিশেল। শোনা গেল ইউনেস্কোর ডিজির কণ্ঠস্বরও। কিন্তু এই পর্বে কোথাও শোনা গেল না পেট্রল-ডিজেলের আকাশছোঁয়া দাম, বেকারত্ব, কিংবা মূল্যবৃদ্ধির কথা।
অনেকে, ১৯৭৪ সালে ভারতের রাজনীতিতে সারা ফেলে দেওয়া একটি বক্তব্যের সঙ্গে শততম মন কি বাত অনুষ্ঠানের তুলনা করেছেন। সেসময় অসমের কংগ্রেস নেতা দেবকান্ত বড়ুয়ার একটি বাক্য ভারতের ইতিহাসে কার্যত মিথ হয়ে গিয়েছে- ‘ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা, ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া’। এই মন্তব্যের জন্য দেবকান্ত বড়ুয়া এবং কংগ্রেসকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। সেই সময় এই বক্তব্য নিয়ে সবথেকে বেশি সরব হয়েছিল জনসঙ্ঘ এবং আরএসএস। অনেকে মনে করছেন, প্রায় ৫০ বছর পর ঠিক একই ভাবনার প্রতিচ্ছবি দেখা গেল দিল্লির দরবারে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সেই সময় যে হিন্দুত্ববাদী দল ও সংগঠন ইন্দিরার ‘স্বৈরাতন্ত্রে’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, আজ তাদেরই উত্তরসূরি হাঁটলেন সেই পথেই। শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনিই নতুন ভারত। তিনি যা বলেন, তাঁর সেই ‘মন কি বাত’-ই দেশের কথা!