দেড়শো বছর ধরে আসানসোলে পূজিত হচ্ছেন ভিড়িঙ্গি শ্মশান কালী
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পশ্চিম বর্ধমান জেলার শিল্পনগরী দুর্গাপুর আসানসোলে রয়েছে ভিড়িঙ্গি শ্মশান কালী মন্দির। বাংলা ১২৯৯ সনে, ইংরেজির ১৮৫২ সালে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। কেটে গিয়েছে দেড় শতকেরও বেশি সময়। আজও এই মন্দিরের প্রতি ভক্তদের বিশ্বাস এক ইঞ্চিও ভাটা পড়েনি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। মা সকলের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।
প্রচলিত ইতিহাস বলে, এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিদ্ধপুরুষ তান্ত্রিক অক্ষয়কুমার রায়। বেনাচিতি বাজারের এই মন্দিরে এখন দেশ-বিদেশের ভক্তদের বিপুল সমাগম ঘটে। ভক্তদের দাবি, এই মন্দিরে এসে দেবীর কাছে প্রার্থনা করলেই তা পূরণ হয়। সেই জন্যই সারা বছর ভিড়িঙ্গি কালীর মন্দিরে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। বছরভর নিত্যপুজো চলে। অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যায় দেবীর বাৎসরিক পুজো হয়। বাৎসরিক পুজোর রাতে দেবীর পুজো উপলক্ষ্যে মন্দির চত্বর ফেটে পড়ে। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে, তিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজনও করা হয়।
ভিরিঙ্গি মন্দির যেখানে অবস্থিত, সেই গ্রামের পশ্চিম পীঠে ছিল ধামাপুকুর। সেখান থেকে তিনটি বিষ্ণুমূর্তি ও মহাদেবের অনুচর নন্দী ও ভৃঙ্গির মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছিল। এই মন্দিরে মা কালীকে ভোগ নিবেদন করার আগে চন্ডভৈরবদের খাবার নিবেদন করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, মন্দিরের প্রতিষ্ঠতা অক্ষয় কুমার রায় তার গুরুদেবের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তখন গ্রামের মানুষ গুরুদেব শেষকৃত্যের সময়ে তাঁর চিতা ভস্মর মধ্যে রুপোর মোহর দেখতে পেয়েছিল।
এই মন্দিরকে ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে হাজারও কিংবদন্তি। রহস্যময় ঘটনা। ভক্তদের দানেই এই মন্দিরের যাবতীয় সব কিছু চলে। কোনও ভক্তই খালি হাতে মায়ের মন্দির থেকে ফেরন না। মন্দিরের পিছনে রয়েছে সিদ্ধাসন, সেখানে পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ বিরাজমান। মায়ের মন্দিরের সামনে রয়েছে হাড়িখাট যেখানে বিশেষ সময়ে বলি হয়। তাছাড়াও নাগেশ্বর, মহাকালভৈরবী, সিদ্ধিদাতা ও হনুমানজীর মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি একটি সমাধি স্থানের উপর অবস্থান করছে। বেনাচিটির বাজারের ভিরিঙ্গি মায়ের মন্দিরের নীচে শায়িত আছেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠতা অক্ষয় কুমার রায় ও তার পুত্র রবীন্দ্রনাথ রায়। পুত্রের সাহায্যে তৈরি হয়েছিল মন্দিরের বর্তমান রূপ। মন্দির প্রাঙ্গণে মায়ের এক বিরল দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে সংকোটমোচন হনুমানের কাঁধে নন্দী ভৃঙ্গিসহ মহাকালী অবস্থান করেন। অমাবস্যার ও কালীপুজোর দিনগুলো বিশেষ ভাবে মায়ের পুজো হয় ও ভক্ত সমাগম বেশী হয়। মায়ের চিন্ময়ী রূপ ভক্তদের মনে আনন্দ, আশার সঞ্চার করে। শ্মশানকালী মন্দির হলেও এখানে কোনও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। এখানকার দেবী কমলা স্বরূপা। অন্নপ্রাশন, বিয়ে ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠান এখানে পালন করা হয়।
মন্দির প্রাঙ্গণে বিপত্তারিণীসহ কালীর অন্যান্য রূপের পুজোও চলে। বাৎসরিক উৎসবের রাতে মন্দিরের পাশে কুমোর বাঁধে দেবীর পুরোনো মূর্তির বিসর্জন দেওয়া হয়। একবছরের জন্য স্থাপিত হয় নতুন মূর্তি। সারারাত ধরে চলে যজ্ঞ, পুজো চলে। পুজো শেষে ভোররাতে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। মন্দিরের গায়ে খোদাই করা ফলক অনুযায়ী, ভিড়িঙ্গি কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৫২ সালে। অর্থাৎ ১৭১ বছর যাবৎ এই মন্দিরে পূজিতা হচ্ছেন মা। আজ দুর্গাপুর ভিড়িঙ্গি শ্মশান কালী মন্দির বাংলার অন্যতম বিখ্যাত কালীপীঠে পরিণত হয়েছে।