বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আজ ব্রতচারির জনক গুরুসদয় দত্তর জন্মদিন, শরীরচর্চা ও স্বদেশী ভাবনার মিশেল তিনি

May 10, 2023 | 2 min read

ব্রতচারী আন্দোলন ও গুরুসদয় দত্ত, ছবি সৌজন্যে-bratachari.com

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি:

“চল কোদাল চালাই
হবে শরীর ঝালাই
খাব ক্ষীর আর মালাই
চল কোদাল চালাই”

লাইনগুলো চেনেন না এমন বাঙালি মেলা ভার। কারণটা ব্রতচারী, আজ সেই ব্রতচারীর জনক গুরুসদয় দত্তর জন্ম। ব্রিটিশ ভারতে পরাধীনতার গ্লানিতে ভুগতে থাকা দেশবাসীকে শরীরচর্চা ও স্বদেশী মন্ত্রে দীক্ষিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল ব্রতচারী আন্দোলন, এই আন্দোলনের প্রানপুরুষ ছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ১৯৩২ সাল নাগাদ গুরুসদয় দত্ত ব্রতচারী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে বেঙ্গল ব্রতচারী সমিতি স্থাপিত হয়। বাংলার ব্রতচারী সমিতির উদ্যোগে ১৯৩৬ সালে শক্তি নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ইউরোপেও ব্রতচারী আন্দোলন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ব্রতচারী বাঙালিদের সত্য, ঐক্য, শ্রম, জ্ঞান ও আনন্দের সঙ্গে জীবনযাপনের শিক্ষা দিয়েছিল। ব্রতচারীদের সংযম, অধ্যবসায়, আত্মনির্ভরতা ও সত্যচারিতা ছিল আন্দোলনের অন্যতম দিক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের উন্নতি সাধনই ছিল আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।

জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য ও আনন্দ; পঞ্চব্রতে দীক্ষিত হয়ে চরিত্র গঠন ও দেশসেবায় আত্মোৎসর্গই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। ব্রতচারী সাধনা চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল: চরিত্র, কৃত্য, সঙ্ঘ ও নৃত্য।
ব্রত লয়ে সাধব মোরা বাংলাদেশের কাজ
তরুণতার সজীব ধারা আনবো জীবন-মাঝ
চাই আমাদের শক্ত দেহ, মুক্ত উদার মন।
রীতিমতো পালবো মোরা মোদের প্রতিপণ

ব্রতচারীকে আরও তিনটি পণ করতে হত:

আমি বাংলাকে ভালবাসি
আমি বাংলার সেবা করব
আমি বাংলার ব্রতচারী হব।

গুরুসদয় দত্তর জন্ম হয়েছিল ১৮৮২, ১০ মে ওপার বাংলায়, অধুনা বাংলাদেশের শ্রীহট্ট জেলার কুশিয়ারা নদীর তীরের বীরশ্রী গ্রামের জমিদার দত্ত বাড়ির ছেলে তিনি। প্রকৃতিপ্রেমিক গুরুসদয় ছোট থেকেই ছিলেন নানান বিষয়ে আগ্রহী। ছেলেবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে নৌকা চালানো, ঘোড়ায় চড়া, শিকার করা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন পারদর্শী। পড়াশুনোতেও ছিল তাঁর অসীম আগ্রহ। বীরশ্রী গ্রামের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারকনাথ রায়ের সাহচর্যে তিনি একের পর এক সাফল্য অর্জন করেন। এফ এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন। বিলেতে গিয়ে তিনি আইসিএস ও ব্যারিষ্টারি পড়েন। ১৯০৫ সালে দেশে ফিরে বিহারে মহকুমা শাসক হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯১১ সালে বিহার থেকে ফিরে, তিনি বাংলায় বিচারবিভাগের কাজে নিযুক্ত হন। ১৯১৬ সাল পর্যন্ত খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা ও বরিশাল জেলার বিচারবিভাগে কাজ করেছিলেন তিনি। ১৯১৭ সালে বীরভূম জেলার কালেক্টর হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে সপরিবারে জাপানে যান, সেখান থেকে ফিরে ১৯২১ সালে বাকুড়ার জেলাশাসক নিযুক্ত হন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী দু-জনে মিলে সমবায় প্রথায় চাষাবাদ, স্বদেশী মেলা ও মহিলা সমিতি গঠন করে সমাজ সেবায় নিয়োজিত করেন। ১৯২৫ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যু হলে তিনি সরোজনলিনী নারীমঙ্গল সমিতি গঠন করেন। ১৯২৬ সালে হাওড়া জেলার জেলাশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে গ্রামের ডাক নামে একটি পত্রিকার প্রচলন করেন। এরপর প্রতিষ্ঠা করেন হাওড়া জেলা কৃষি ও হিতকারী সমিতি। এরপরে ১৯২৮ সালে হাওড়াতে লিলুয়ার রেলশ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলিচালনার তিনি তীব্র নিন্দা করেন। ১৯২৯ সালে তিনি রোমে এক কৃষি সম্মেলনে যোগ দিয়ে দেশে ফিরে মৈমনসিংহ জেলার জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত হন। মৈমনসিংহ লোকনৃত্য ও লোকগীতি সমিতি গড়েন।

বীরভূমে লিজ ক্লাব এমেচার মিউজিক্যাল সোসাইটি গঠন করে লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির খোজে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন গান লেখা শুরু করেন। ১৯৩১ সালে গঠন করেন বঙ্গীয় পল্লীসম্পদ রক্ষা সমিতি। ১৯৩২ সালে সেই সমিতির পক্ষ থেকে একটি লোকনৃত্য প্রশিক্ষন শিবিরের আয়োজন করেন। সেখানেই ৬ ফেব্রুয়ারী তিনি ব্রতচারী প্রবর্তনের ঘোষনা করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য হন। সেই বছর সমিতির নাম বদলে সর্বভারতীয় লোকনৃত্য ও লোকগীতি সমিতি গঠন করেন। ১৯৩৪ সালে ফের নাম বদলে বাংলার ব্রতচারী সমিতি গঠন করেন এবং সরকারীভাবে নথিভূক্ত করেন। ১৯৩৭ সালে বড় দল নিয়ে হায়দ্রাবাদে মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষ বসুর উপস্থিতিতে ব্রতচারী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯৪০ সালে কলকাতায় ১০১ বিঘা জমিতে ব্রতচারী গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ব্রতচারীর জনক গুরুসদয় দত্ত।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#birth anniversary, #bratachari, #gurusaday dutta

আরো দেখুন