বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সামনেই জামাই ষষ্ঠী, জামাইরা এখনও কি ভিড় জমান এই মেলায়?

May 12, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: “জামাই এলো বাড়ি, লাগলো তাড়াতাড়ি, লুচি ভাজার জোগাড় করো।” প্রাচীনকাল থেকেই অবিভক্ত বাংলায় মহিলাদের মুখে মুখে ঘুরত এই ছড়াটি। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী দেবীর পূজার মধ্যে দিয়ে জামাই ষষ্ঠী ব্রত পালন করা হয়। তাই জামাই ষষ্ঠী কি, সেটা সব বাঙালিই জানেন, কিন্তু জানেন কি ‘জামাই মেলা’ উৎসবও আছে। অনেকে এই মেলাকে বলে থাকেন মাছ মেলা।

শোনা যায় প্রায় ৪০০ বছর ধরে বাংলাদেশের উত্তরে বগুড়া জেলার সদর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পোড়াদহ-এ চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’। এই মেলায় ভিড় জমান ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল মতের মানুষ। কারও কারও মতে, ঐতিহ্য অনুযায়ী মেলার সময় শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই মেলা থেকে সবার জন্য বাজার করেন তিনি। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত।

জেনে নেওয়া যাক জামাই মেলার ইতিহাস

প্রায় ৪০০ বছর আগে এক মাঘের শেষ বুধবারে রাজশাহীর পোড়াদহ সংলগ্ন মহিষাবান নদীতে অলৌকিকভাবে বড় একটি কাতলা মাছ নাকি প্রতি বছর সোনার চালুনি পিঠে নিয়ে ভেসে উঠতে দেখা যেত। আর সেই অলৌকিক ঘটনা দেখার জন্য ভিড় করতেন স্থানীয় মানুষ। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এক সন্ন্যাসী এই অলৌকিক মাছের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য গ্রামবাসীদের নির্দেশ দেন। তাঁর কথা মতো পোড়াদহ বটতলায় মাঘের শেষ বুধবারে স্থানীয় লোকজন অর্ঘ্য নিবেদন শুরু করেন। বটগাছকে ঘিরে সন্ন্যাসীদের অস্থায়ী আশ্রমও তৈরি হয়। পরে এটি গ্রামীণ মেলার রূপ নেয়। মেলার নাম হয় সন্ন্যাসী মেলা। সন্ন্যাসীরা চলে গেলেও, মেলাটি রয়ে যায়। কালক্রমে এই মেলার নাম পরিবর্তন হয়। তার কারণ, মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের মেয়েরা বাপের বাড়ি ফিরতেন। সঙ্গে আসতেন জামাইরা। তাই কালক্রমে সন্ন্যাসী মেলার নাম পাল্টে হয় জামাই মেলা। জামাইদের মনোরঞ্জনে জন্য নানান ব্যবস্থা থাকে এই মেলায়।

বর্তমানে মাঘের শেষ বুধবার মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্বীয় স্বজনরা আসেন। মেলার সময় ঘরে ঘরে মেয়ে-জামাই ও অতিথি আপ্যায়নের জন্য বড় মাছের চাহিদা থাকে। হয়তো সে কথা মাথায় রেখেই মেলায় বড় মাছের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

জানা গেছে, জামাই মেলা বা মাছ মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল অতিকায় আড় মাছ বা ‘বাগাইড়’ মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। আবার শ্বশুরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা চলে মেলার সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে জামাইকে আপ্যায়ন করার ক্ষেত্রে। এই মেলায় ৩০ -১০০ কেজি ওজনের বাঘা আইড় মাছ পাওয়া যায়। কোনও কোনও ‘বাগাইড় মাছ’ দৈর্ঘ্যে ৭-৮ ফুটও হয়। একা এই মাছে কেউ কিনতে পারেন না, অনেকে মিলে একটি অতিকায় বাগাইড় মাছ কিনে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এছাড়াও এই মেলাতে ২০-৩০ কেজি ওজনের পাঙ্গাস, কাতলা, রুই,মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, কালবোশ মাছ বিক্রি হয়।

জামাই মেলার আরেকটি আকর্ষণ মিষ্টি। বিশালাকৃতি রসগোল্লা, চমচম, ক্ষীরমোহন, সন্দেশ, জিলিপি, নিমকি, তিলের নাড়ু ও বিভিন্ন ধরনের শুকনো মিষ্টি। এক একটি মিষ্টি দেড় থেকে ২কেজি ওজনেরও হয়ে থাকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Jamai Mela, #Macher Mela

আরো দেখুন