শুভেন্দুকে মানতে পারছেন না দিলীপ, তাই শাহকে স্বাগত না জানিয়েই গিয়েছিলেন ইডেনে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বঙ্গ বিজেপিতে গুরুত্বপূ্র্ণ কে? এই প্রশ্নটা খুবই পরিচিত। সম্প্রতি অমিত শাহের বঙ্গ সফরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীই তা হলে এখন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পছন্দের পাত্র! আর এই গুঞ্জন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অমিত শাহর সফর সফরকালে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি।
রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সোমবার (৮ মে) গভীররাতে অমিত শাহর বিমান অবতরণ করে দমদম বিমানবন্দরে। তাঁকে স্বাগত জানাতে সেখানে উপচে পড়েছিল রাজ্য বিজেপি নেতাদের ভিড়। ফুল, উত্তরীয় নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। সুকান্ত থেকে শুভেন্দু, নিশীথ থেকে রাহুল সিনহা বাদ যাননি কেউই, এমনকি বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন মুকুল রায়ও। কিন্তু দেখা মিলল না বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের! বিজেপি সূত্রের খবর, দলের তরফে সেদিন দিলীপকে বলা হয়েছিল, অমিত শাহকে বিমান বন্দরে ফুলের বোকে দিয়ে স্বাগত জানাতে। কিন্তু দিলীপ জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ইডেনে আইপিএলের ম্যাচ দেখতে যাবেন। ইডেনে সেদিন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের মধ্যে ম্যাচ ছিল।
যদিও পরদিন সকালে অর্থাৎ ২৫শে বৈশাখের দিন অমিত শাহ প্রথমে গিয়েছিলেন, জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে। সেখানে রাজ্য বিজেপির অন্য নেতাদের সঙ্গে দিলীপও ছিলেন। কিন্তু তারপর গোটা দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে কাটালেও দিলীপ ঘোষকে তাঁর ধারেকাছে দেখা যায়নি।
একটি সংবাদমাধ্যম দিলীপ ঘোষকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমার তো দলের কর্মসূচি ছাড়া আর কোথাও মন থেকে যেতে ইচ্ছেই করে না”।
২৫ বৈশাখের দিন সায়েন্স সিটিতে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ। সেই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ‘খোলা হাওয়া’ নামে একটি সংগঠন। বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত সহ দলের নানা স্তরের নেতা ওই সংগঠনের মাথা। সেদিন সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপির সকলের গন্তব্য ছিল সায়েন্স সিটি। গরহাজির ছিলেন শুধুমাত্র দিলীপ ঘোষ।
তাঁর কথায়, “অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অনুষ্ঠানে গিয়ে শুনলাম, অফিসে আমার নামে নাকি কার্ড এসেছে। এরকম কত কার্ডই তো আসে। কার্ড পেলেই কি লোকে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে চলে যায়? আমি অন্তত সে প্রকৃতির মানুষ নই।’’ তাহলে ২৫ বৈশাখ অমিত শাহ কলকাতায় থাকার দিন তিনি সারাদিন কী করলেন? একটি নিউজ পোর্টালকে সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি পার্টির সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের সময় দিয়েছিলাম, যাঁরা অনেক দিন ধরে দেখা করতে চাইছিলেন”। তাঁর বক্তব্য, “আমি সংগঠন নিয়ে সর্বদা ভাবি। আমি মনে করি, সেটাই আসল কাজ। কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকা। আমি সেই কাজটা মনযোগ দিয়ে করে যাচ্ছি”।
শাহ গত মাসেও রাজ্যে এসেছিলেন। বীরভূমে তাঁর জনসভায় সারাক্ষণ ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেখানে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি বিজেপির নেতা-কর্মীদের নজর এড়ায়নি। জানা যায় তিনি সেদিন ছিলেন আন্দামান-নিকোবরে।
সংসদীয় কমিটি এবং দলীয় সূত্রের খবর, দিলীপের ওই আন্দামান সফর খুব জরুরি ছিল না। তিনি মনে করলে সফর বাতিল করে শাহের জনসভার মঞ্চে হাজির থাকতে পারতেন।
এমনিতেই একটা গুঞ্জন বিজেপি’র অন্দরে শোনা যায়, রাজ্য বিজেপির তিনটি পাওয়ার সেন্টার, শুভেন্দু, সুকান্ত এবং দিলীপ। ইদানিং দিল্লিকে তুষ্ট করতে দিলীপ খানিক ব্যাকফুটে। ২৫শে বৈশাখের পর সেই জল্পনাই আরও জোড়াল হল বলেই মনে করছেন অনেকে।