বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আজ ১৯ মে, এদিনই বাংলা ভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন এগারোজন

May 19, 2023 | 2 min read

এদিনই বাংলা ভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন এগারোজন

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ ১৯ মে, ভাষা-শহিদ দিবস। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে জীবনপণ লড়াইয়ের দিন আজ। এগারো জনের প্রাণ কেড়েছিল আসাম সরকার ও তার পুলিশ বাহিনীর গুলি। বছর ষোলোর এক কিশোরীও ছিলেন তাঁদের মধ্যে, নাম কমলা ভট্টাচার্য। মাতৃভাষার অধিকার আন্দোলনের, তিনিই প্রথম নারী ভাষা-শহিদ।

দশটি ভাই চম্পা আর একটি পারুল বোন
কলজে ছিঁড়ে লিখেছিল, ‘এই যে ঈশান কোণ
কোন ভাষাতে হাসে কাঁদে কান পেতে তা শোন।’

শুনলি না? তো এবার এসে কুচক্রীদের ছা
তিরিশ লাখের কণ্ঠভেদী আওয়াজ শুনে যা
বাংলা আমার মাতৃভাষা, ঈশান বাংলা মা।

কবিতার নাম উনিশে মে ১৯৬১ শিলচর। যদিও আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। সে সময় আসামে এক-তৃতীয়াংশ বাংলাভাষী মানুষের বাস। আসামের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিহা ঘোষণা করলেন, আসামের সরকারি ভাষা হবে, অসমীয়া। এর প্রতিবাদে জনমত গড়ে উঠতে লাগল। জনমতকে আন্দোলনে পরিণত হওয়া থেকে ঠেকাতে শুরু হল চক্রান্তের জ্বাল বোনা। জাতি-দাঙ্গা আবহ তৈরি করা হয়েছিল। প্ররোচনায় পা দিয়ে একদল অসমীয়া গৌহাটির এক বাংলাভাষী অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণ করল। আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল হিংসা। খুনের রাজনীতি চলল, বাড়ি পুড়ল, জনজীবন বিপর্যস্ত হল। মানুষ প্রাণভয়ে বাংলায় পালাতে আরম্ভ করতে শুরু করেন, শিলচর-বরাক উপত্যকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেন মানুষজন।

৫ ফেব্রুয়ারি, গড়ে উঠল কাছাড় গণ-সংগ্রাম পরিষদ। বাংলাকেও সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ক্রমাগত দাবিতে সরব হতে শুরু করল সংগঠন। আসাম সরকার নিরুত্তর। আন্দোলনকারীরা সত্যাগ্রহের‌‌ পথে নামল। শুরু হল পদযাত্রা। রবীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করলেন, ১৩ মে-র মধ্যে তাঁদের দাবী মানা না হলে ১৯ মে রাজ্যজুড়ে পালিত হবে সর্বাত্মক ধর্মঘট। সরকারের টনক নড়ল না। ১৮ মে রবীন্দ্রনাথ সেনসহ আরও দুই নেতাকে পুলিশ আটক করল।

১৯ মে সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা সরকারি অফিস-আদালত-রেল স্টেশন সর্বত্রই দলে দলে অবস্থান করে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট শুরু করলেন। অশান্তি শুরু হল দুপুরে, শিলচর স্টেশনে। ন’জন ধর্মঘটিকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। পথ আটকে দাঁড়ালেন ধর্মঘটিরা। পুলিশ যাঁদের গাড়িতে তুলেছিল, তাদের নামিয়ে দিতে বাধ্য হল। ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ পুলিশের ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিল। ধর্মঘটিদের ওপর লাঠিচার্জ চলল। পাল্টা প্রতিরোধ হল। চলল সতেরো রাউন্ড গুলি।এগারোজন প্রাণ হারালেন, তারা হলেন কানাইলাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্রচন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য।

এগারো জন ভাষা-শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা অধিকার পেল। বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা হল। শিলচর স্টেশনের নাম, ভাষা-শহিদ স্টেশন হল। স্টেশনে শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। শহিদের রক্ত ব্যর্থ হন না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#assam, #bengali language, #bangla bhasa, #bhasa shahid dibas, #silchar

আরো দেখুন