রাজ্য BJP-র সংগঠন কেবল কাগজে-কলমে, সুকান্ত-শুভেন্দুকে আক্রমণ দিলীপের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপি নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালি করার কথা বলছে, নানান পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বৈঠকের পর বৈঠক করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আগের মতোই রয়ে গেছে। সেই একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়া, সুকান্ত-শুভেন্দু—দিলীপের দ্বন্দ্ব। রাজ্য বিজেপি’র কার্যনির্বাহী বৈঠকে এই বিষয়টি আরও একবার পরিস্কার হয়ে গেল।
রাজ্য বিজেপির কার্যনির্বাহী বৈঠকে বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত তোপ দাগলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সূত্রের খবর, এই বৈঠকে দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ দলের উপরের তলার সঙ্গে নিচু তলার সংযোগের বড় অভাব। কাগজে-কলমে দলের সংগঠন। মণ্ডল স্তরে কোনও সংগঠন নেই। অঞ্চল কমিটিতেও লোক নেই। তাঁর দাবি, দলের মোর্চাগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। মূল দলের সঙ্গে তাদের কোনও বোঝাপড়াই নেই। জেলার পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক ডাকলে ৪-৫ জনের বেশি উপস্থিত থাকেন না। জানা গেছে, ওই বৈঠকে প্রথম পর্বের শেষ বক্তা হওয়ায় দিলীপ ঘোষের বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় আর কেউ বলার সুযোগ পাননি।
এর আগে দিলীপ-সুকান্তদের কাজিয়া ধামাচাপা দিতে দিলীপ ঘোষকে জাতীয় পদ দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু আখেরে কোনও লাভ হয়নি। একনায়কতন্ত্রী শুভেন্দু ও ‘মিডিয়া নির্ভর’ সুকান্তদের একাধিকবার কাঠগড়ায় তুলেছেন দিলীপ ঘোষ। প্রসঙ্গত, বিজেপির পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য সুকান্তর বিরুদ্ধে তিনি বলেছিলেন, “সুকান্তর অভিজ্ঞতা কম। সবে দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু ওঁর জানা উচিত যারা এতদিন আন্দোলন করেছেন, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।” আবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘ডিসেম্বর’ তত্ত্ব খারিজ করে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, এভাবে রাজনীতি হয় না। কোনও দিন ঘোষণা করে কিছু বলা যায় না।
এছাড়াও, দিলীপ ঘোষ রাজ্যের দায়িত্বে থাকাকালীন এক নতুন কর্মসূচিও নিয়েছিলেন । ‘দিলীপের চা-চক্র’ নাম দিয়ে রাজ্য জুড়ে চায়ের সঙ্গে আড্ডা এবং রাজনৈতিক প্রচার শুরু হয়েছিল। এর দরুন তৃণমূল স্তরে বিজেপির আদি কর্মীদের চাঙ্গা করতে সফল হয়েছিলেন তিনি। বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দায়িত্ব পাওয়ার পর দিলীপের আদলে ‘পাড়ায় সুকান্ত’ কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুকান্তর সেই জনসংযোগ যাত্রা দিলীপ ঘোষের মতোন জনপ্রিয়তা পায় নি।
তথ্য বলছে, রাজ্য বিজেপির দায়িত্বে দিলীপ ঘোষ থাকাকালীন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আশাতীত ফল করেছিল বঙ্গ বিজেপি। সেই সময় দলের সংগঠনও বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার সুফল হিসেবে লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি ও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসনে জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু দিল্লির নির্দেশে হঠাৎ রাজ্য নেতৃত্বের বদলে বিজেপির আদি কর্মীদের মনোবল ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে। ২১শের নির্বাচনের পর সংগঠন সামলাতে ব্যর্থ সুকান্তদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক বিধায়ক-নেতা-কর্মীরা।
স্বভাবতই ওয়াকিবহাল মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ফাঁকা আওয়াজের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন সুকান্ত-শুভেন্দু? ক্ষয়িষ্ণু সংগঠনে নজর না দিয়ে মিডিয়া নির্ভর রাজনীতি বেছে নিচ্ছেন তাঁরা? তদুপরি দিলীপ ঘোষের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব না দিয়ে সিপিএম ও তৃণমূল থেকে আসা কিছু নেতাদের বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করল রাজ্য নেতৃত্ব? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। তাই আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘আচ্ছে দিন’ যে আসবে না, সে বিষয়ে এখন থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা।