আজও বঙ্গে পূজিত হন এই দেবী, জেনে নিন মনসা পুজোর নেপথ্যে কাহিনি
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মনসা হলেন একজন লৌকিক দেবী। শোনা যায়, সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে, সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে, প্রজনন ও ঐশ্বর্যলাভের উদ্দেশ্যে এই দেবীর পুজো করা হয়। সাধারণত শ্রাবণ সংক্রান্তি বা আষাঢ়ী পঞ্চমীতে মনসাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই দেবী ‘কামরূপা’, অর্থাৎ ইচ্ছানুযায়ী রূপধারণ ও রূপপরিবর্তন করতে পারেন। সারাদিন উপবাস করে পুজো শেষে সাবু-দুধ-কলা দিয়ে মনসার পুজো সম্পন্ন করেন মহিলারা।
এই পুজোর প্রচলিত হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কাহিনি
পুরাণ মতে, মনসা হলেন শিবের স্বীকৃতকন্যা ও জরৎকারুর পত্নী। জরৎকারু মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মনসার মা চণ্ডী তাঁকে ঘৃণা করতেন কিন্তু পরবর্তীকালে মাতা চণ্ডী মনসাকে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কোনও কোনও ধর্মগ্রন্থে আছে, শিব নয়, ঋষি কাশ্যপ হলেন মনসার পিতা।
শোনা যায়, সর্পদংশনের ভয় থেকে মানুষের পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা কশ্যপমুনিকে একটি মন্ত্র বা বিদ্যাবিশেষ আবিষ্কার করার আদেশ দেন। ব্রহ্মার আদেশ পেয়ে কশ্যপ যখন মনে মনে এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন, তখন তাঁর মননক্রিয়া থেকে আবির্ভূত হন এক স্বর্ণবর্ণা দেবী। যেহেতু মন থেকে তাঁর জন্ম, তাই তিনি ‘মনসা’।
যে সব কবি বাংলা ভাষায় মনসার চরিতকথা লিখেছেন তাঁদের মধ্যে তন্মধ্যে কানাহরি দত্ত, কেতকা দাস, ক্ষেমানন্দ, নারায়ণ দত্ত, বিজয়গুপ্তের নাম উল্লেখযোগ্য। এঁদের লিখিত পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গলে দেবীর যে চরিত্রচিত্রণ করা হয়েছে, তা স্বভাবতই ভয় ও বিস্ময়কর।
মনসামঙ্গল কাব্য থেকে জানা গেছে, চাঁদ সদাগরের কাছ থেকে পুজো পাওয়ার বাসনায় একের পর এক সমস্যা তৈরি করেন দেবী মনসা। তাঁর পুত্র কন্দর্পতুল্য লখিন্দরের প্রাণ সর্পাঘাতে হরণ করেন দেবী। এই দেবীর দ্বাদশ নাম– জরৎকারু, জগৎগৌরী, মনসা, সিদ্ধযোগিনী, বৈষ্ণবী, নাগভগিনী, শৈবী, নাগেশ্বরী, জরৎকারুপ্রিয়া, আস্তীকমাতা, বিষহরী ও মহাজ্ঞানযুতা। সর্পবিষ হরণ করার কৌশল দেবীর জানা আছে বলেই তাঁকে বিষহরী বলা হয়।
বাংলার ঘরে ঘরে এবং উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে মনসার পুজো করা হয়। কোথাও কোথাও মূর্তির বদলে দেবীর প্রতীক হিসেবে অনন্ত, বাসুকি, পদ্ম, মহাপদ্ম, তক্ষক, কুলীর, কর্কট, শঙ্খ-র পুজো হয়ে থাকে।