গোষ্ঠী সংঘর্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্য, বিপর্যস্ত মণিপুর, উদাসীন কেন্দ্র
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ক্রমশ জটিল হচ্ছে মণিপুরের পরিস্থিতি। গত রবিবার রাত থেকেই ফের নতুন করে অশান্তি দানা বেঁধেছে। হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে ইম্ফলের চেকন এলাকায়। স্থানীয় বাজারের দখল নিয়ে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছে। লুঠপাট চলছে দোকানপাট, ঘর-বাড়িতে। মঙ্গলবার গভীর রাতে সে রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলার ফউবাকচাও এলাকায় একটি জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ ৩টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। তার পাল্টা হিসাবে অন্য আর একটি জনগোষ্ঠীর মানুষ ওই এলাকাতেই আরও ৪টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। এই ঘটনায় এক জন মারা গিয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। গুরুতর আহত ২ জন।
সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গুলিতে মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় ৩০ বছরের এক যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া পৃথক আরও কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন জখম হন। বুধবারই নতুন করে অশান্তি শুরু হয় মণিপুরের বিষ্ণুপুর, ইম্ফল পশ্চিম এবং পূর্বে। খবর মিলেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বিষ্ণুপুর জেলার বিভিন্ন বাড়িতে হানা দেয় জঙ্গিরা। তখনই গ্রামবাসীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। জানা যায়, বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় জঙ্গিরা। তার মধ্যে রাজ্যে এক মন্ত্রীর বাড়িও রয়েছে।
অন্যদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যেই সাধারণ মানুষের শিরে সংক্রান্তি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্য। ১০০ টাকা কিলো আলু, একটি ডিম ১০ টাকা আর চালের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। আর এই বিপুল দামে কেনার পরও যে রান্না করা যাবে তা নয়। কারণ গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ছাড়িয়েছে ১৮০০ টাকা। সংঘর্ষ বিধ্বস্ত মণিপুরের হাল এটাই। উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী ট্রাক চলাচলও স্বাভাবিক নয়। ইম্ফল পশ্চিমের বহু জায়গায় পেট্রলের দাম লিটারপিছু ১৭০টাকা ছুঁয়েছে। বলতে গেলে, এখন মুখের গ্রাস যোগাতেও জেরবার মণিপুরের সাধারণ মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রের সরকারের উদাসিনতার অভিযোগ আনছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাঁদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ গুয়াহাটিতে দাঁড়িয়ে মণিপুরে শান্তি ফেরানোর কথা বলছেন, অথচ ২২দিন ধরে মণিপুর জ্বলছে, তিনি একবারও ইম্ফলে যেতে পারলেন না!
প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে মণিপুর রাজ্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। এরপরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য।