গুজরাতের হাজার হাজার মহিলা নিখোঁজ? চাপে পড়ে ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত BJP?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ধর্মান্তরিত করে কেরালার মেয়েদের পাঠানো হচ্ছে সিরিয়ার জঙ্গি ক্যাম্পে। এই চিত্রনাট্যের উপর তৈরি বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে দেশজুড়ে তুঙ্গে তরজা। এহেন পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে গুজরাটের মহিলা নিখোঁজ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। যাকে কেন্দ্র করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিজেপি শাসিত এই রাজ্য।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গুজরাট থেকে ৪০ হাজারের বেশি মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৬-য় ৭ হাজার ১০৫, ২০১৭-য় ৭ হাজার ৭১২, ২০১৮-য় ৯ হাজার ২৪৬ ও ২০১৯-এ ৯ হাজার ২৬৮ জন নিখোঁজ হন। শুধু তাই নয়, কোভিড অতিমারী শুরুর পরও গুজরাটি মেয়েদের নিখোঁজ হওয়া থামেনি বলে জানিয়েছে NCRB। কেন্দ্রীয় সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-তে ৮ হাজার ২৯০ জন নিখোঁজ হন। অর্থাৎ ২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে মোট ৪১ হাজার ৬২১ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে সরকারি তথ্যে উল্লেখ রয়েছে। এই ইস্যুতে ২০২১-এ গুজরাত বিধানসভায় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্যের শাসক দল বিজেপি।
‘কেরালা স্টোরি’ নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে তখন দেশের বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, যে প্রযোজক-পরিচালকরা ‘কাশ্মীর ফাইলস’ বা ‘কেরালা স্টোরি’র মতো সিনেমা তৈরি করেছেন তারা কি তেমনভাবেই ‘গুজরাট স্টোরি’ নাম দিয়ে একটি সিনেমা বানাবেন? কাশ্মীর ফাইলস এবং কেরালা স্টোরি প্রচারে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন বাজারে নেমে পড়েছিলেন ঠিক তেমনি কি গুজরাত স্টোরির প্রচারেও মাঠে নামবেন?
আর কয়েকদিন পরেই বসতে চলেছে সংসদের বাদল অধিবেশন। বিরোধীরা এই বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষকে চেপে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেটা আগাম বুঝতে পেরে, মাঠে নেমে পড়েছে গুজরাতের বিজেপি সরকার ও পুলিশ। গুজরাতের মহিলাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তারা উড়িয়ে দিচ্ছে। গুজারাত পুলিশের তরফে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হচ্ছে, এই দাবি ‘অর্ধসত্য’, কারণ গুজরাতের ৩৯ হাজার ৪৯৭ জন নাকি ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন ও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।
গুজরাত পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক (এডিজি-ল অ্যান্ড অর্ডার) নরসিংহ কুমার জানিয়েছেন, ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে, গত ছয় বছরে ৫১ হাজার ৪৩৩ জন মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন, কিন্তু ৫০ হাজার ১০৫ জনকেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তাই বলা যেতে পারে, ৯৭% মহিলা আদতে ফিরেই এসেছেন। শুধুমাত্র ১৩২৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।’
তবে আশঙ্কার বিষয় যেটা, এই নিরুদ্দেশের অভিযোগ কিন্তু প্রতি বছরই বাড়ছে। তবে তারও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন গুজরাতের ওই পুলিশকর্তা। বলেছেন, ‘মুখ্যত দুই ধরনের কারণ এই ঘটনার জন্য দায়ী বলা যেতে পারে। প্রথমত, ভিন্ জাতে বিয়ে। যেখানে বাড়িতে মানবে না, এই আশঙ্কায় মেয়েটি পালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আঠারো বছরের নীচে নাবালিকা মেয়েরাও পালিয়ে যাচ্ছে, যাতে আঠারো হয়ে গেলে ফিরে এসে আইনসম্মতভাবে বিয়ে করা যায়! এছাড়াও জনবহুল মেলায় হারিয়ে যাওয়া বা কম নম্বর পেয়ে লজ্জা বা মারধরের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু পুলিশ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাদের খুঁজে বের করে বাড়ি ফিরিয়ে দেয়।’
কিন্তু গুজরাত নিয়ে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পর্যবেক্ষণ, প্রতি বছর ‘নিখোঁজে’র অভিযোগ বাড়ছে, যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত কিন্তু গুজরাত পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ এই বিষয়টি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। বরং তারা এখন বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।