বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলার প্রথম বারোয়ারি পুজো বিন্ধ্যবাসিনী

May 28, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলা জুড়ে চলছে উৎসবের মরশুম। আর উৎসব মানেই পুজো-পার্বন, লোকাচার, অনুষ্ঠান,খাওয়া দাওয়া। আর এর সবটাই বেশি উপভোগ করা যায় বারোয়ারি পুজোয়। জানেন কি বারোয়ারি পুজোর প্রথম প্রচলন হয়েছিল গুপ্তিপাড়ায়। অবিভক্ত বাংলাকে একসময় পথ দেখিয়েছিল হুগলি নদীর তীরের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম।

গুপ্তিপাড়া হুগলির প্রাচীন জনপদ। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের এই জনপদে এক সময় ছিল সেনদের জমিদারি। তখনও দুর্গাপুজো হত জমিদার বা রাজবাড়িতে। সেনদের জমিদার-দালানেও হত দুর্গাপুজো। ওই দালান থেকেই ফিরে আসতে হয়েছিল গুপ্তিপাড়ার মহিলাদের। তাঁরাই গ্রামে ফিরে এসে জগদ্ধাত্রীকে বিন্ধ্যবাসিনী রূপে পুজো করা শুরু করেন। হুগলি গেজেটিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১১৫৯ বঙ্গাব্দে শুরু হয় গুপ্তিপাড়ার ওই পুজো। এটি বর্তমানে বাংলার প্রথম বারোয়ারি পুজো বলে পরিচিত।

জানা গেছে, শুরুতে অর্থের অভাবে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে শুরু হয়েছিল পুজো। পরে পাকা দালান তৈরি করে দেয় সেন পরিবার। যা আজও ‘বিন্ধ্যবাসিনী তলা’ নামে পরিচিত। নিয়ম নিষ্ঠা মেনে সাত্ত্বিক, তামসিক ও রাজসিক মতে আজও চলে মাতৃ আরাধনা। এখানে শুধু নবমীতে পুজো হয়। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী একইদিনে পুজো সারা হয়। দেবীকে দেওয়া হয় মালসা ভোগ।

শারদা তিলক তন্ত্রে এই দেবীর কথা উল্লেখ আছে

বিন্ধ্যবাসিনী ধ্যানম
কালপাবকসন্নিভাং কলিতার্দ্ধচন্দ্রশিরোরুহাং
ভালনেত্রবিভূষণাং ভয়দায়ীসিংহনিষেদুষিম্ ।
চক্রশঙ্খকৃপাণখেটকচাপবাণকরোটিকা-
শুলবাহিভুজাং ভজে বিজিতাখিলাসুরসৈনিকাম্ ।।

অর্থাৎ- যে ভগবতী প্রলয়াগ্নির সমান দেদীপ্তিমানা, যার কেশপাশে অর্ধচন্দ্রযুক্ত কিরীট সুশোভিত, ভালস্থ নেত্ররূপী আভূষণে বিভূষিত, মহাভয়ানক সিংহের ওপরে আরোহণের কারণে যাকে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর লাগছে, যিনি তার অষ্টভুজায় চক্র, শঙ্খ, কৃপাণ (খড়্‌গ), খেটক (ঢাল), চাপ (ধনুক ), বাণ, কপালপাত্র (মড়ার মাথার খুলি) এবং ত্রিশূল ধারণ করেছেন তথা যিনি অসুর সৈন্য সমূহের ওপরে বিজয় প্রাপ্ত কারিনী এমন বিন্ধ্যবাসিনীর আমি ধ্যান করি ।

ভবিষ্য পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রতকথা বা ভাগবত পুরাণ থেকে জানা যায়, দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের অষ্টমী তিথিতে গোকুলে নন্দপত্নী যশোদার গর্ভে জন্ম নেয় এক অপরূপ সুলক্ষণা কন্যা। অন্যদিকে, মথুরায় নৃশংস কংস একে একে তখন বসুদেব-দেবকীর প্রতিটি সন্তানকে হত্যা করছেন। দেবকীর অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণের জন্ম হলে বসুদেব নিজ পুত্র কৃষ্ণকে গোকুলে রেখে নন্দের শিশুরূপী দেবী যোগমায়া বা মহামায়াকে গোপনে নিয়ে আসেন মথুরার কারাগারে। কংস শিশুটিকে দেবকীর গর্ভজাত মনে করে হত্যা করতে গেলে সেই শিশু শূন্যে চলে গিয়ে ধারণ করে অষ্টভুজা রূপ। কন্যা তখন নিজের পরিচয় দিয়ে অত্যাচারী কংসকে বলেন, ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে!’। এরপর দেবী সেখানেই অন্তর্ধান করেন ও বিন্ধ্যপর্বতে গমন করেন। পরবর্তীতে এই বিন্ধ্যপর্বতে নিবাস করার কারণে দেবী বিন্ধ্যবাসিনী নাম বিখ্যাত হন। শোক ও দুঃখ নাশের কামনায় দেবী বিন্ধ্যবাসিনীর আরাধনা করা হয়। কথিত আছে, দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং তাঁকে বিন্ধ্যাচলে পুজো করেছিলেন।

শোনা যায়, বহু যুগ আগে আড়িয়াদহ গ্রামের ধর্মপ্রাণ হরিশ্চন্দ্র সিংহ তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে বিন্ধ্যাচলে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে সাড়ম্বরে বিন্ধ্যবাসিনীর আরাধনা দেখে তিনি আপ্লুত হন। তারপর ভক্তিভরে দেবীমূর্তির চিত্র অঙ্কন করে গ্রামে নিয়ে এসে বিন্ধ্যবাসিনী পুজো শুরু করেন। অষ্টভুজা দেবীর সঙ্গে পূজিত হন মহাদেব, শ্রীবিষ্ণু ও তাঁর বাহন গরুড় ও সঙ্গে রাজা কংসের আস্ফালনরত মূর্তি। তবে এখানে দুর্গাপুজোর মতোন ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত পুজো হয়। আর ৫ দিনের মাথায় শুক্লা দশমীতে করা হয় বিসর্জন। প্রতি বছর জামাইষষ্ঠীর দিন দক্ষিণেশ্বর-আড়িয়াদহ অঞ্চলে আদ্যাপীঠ মন্দিরের কাছে এই পুজো উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। পাঁচ দিনের এই মেলা ও পুজোয় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bindhyabasini Puja, #hooghly

আরো দেখুন