পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

৫০৭ বছরে পানিহাটির দণ্ড মহোৎসব, জেনে নিন ইতিহাস

June 2, 2023 | 2 min read

৫০৭ বছরে পানিহাটির দণ্ড মহোৎসব

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ইতিহাস আর অধ্যাত্মবাদের মিশেল হল পানিহাটির দণ্ড মহোৎসব, ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের সময় পানিহাটিতে বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল। পানিহাটির যে গাছের নিচে চৈতন্যদেব এবং নিত্যানন্দ বসে ধর্মপ্রচার করেছিলেন, সেই ‘অক্ষয় বটবৃক্ষ’ এখনও অক্ষত।

প্রত্যেক বছর জৈষ্ঠ্য মাসে দণ্ডমহোৎসব মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দণ্ড মহোৎসবের পিছনে রয়েছে আরেক ইতিহাস। হুগলির সরস্বতী নদীর তীরে কৃষ্ণপুরের জমিদার গোবর্ধন দাসের ছেলে রঘুনাথের অল্প বয়স থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। এক সময় তিনি বাবা-মা এবং অল্প কিছুদিন হলো বিয়ে করা নববধূকে ছেড়ে চৈতন্যদেবের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। অবশেষে পানিহাটিতে তিনি চৈতন্যদেবের দেখা পান এবং তাঁর কাছে দীক্ষা নেওয়ার আবদার করেন। কিন্তু চৈতন্য তাঁকে দীক্ষা নয়, দণ্ড (শাস্তি) দেন, কারণ তিনি পরিবারকে দুঃখ দিয়ে সংসার ত্যাগ করে চলে এসেছিলেন,সেই অপরাধে দণ্ড প্রাপ্তি হয় তার। সেই শাস্তি ছিল ভক্তদের পেট পুরে খাওয়াতে হবে চিঁড়ে-দই-ফল। প্রত্যেক বছর দণ্ড মহোৎসবের মেলায় সেই অভিনব শাস্তিরই উদযাপন হয়।

সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, তখন সন্ন্যাস নিয়ে শান্তিপুরে ফিরেছেন শ্রীচৈতন্য। দলে দলে ভক্ত অনুরাগী মানুষের আসছেন দেখতে। ভক্তদের জোয়ারে শান্তিপুর জনসমুদ্র। হঠাৎ এক সকালে শান্তিপুরের গঙ্গার ঘাটে ভিড়ল একখানি সুসজ্জিত নৌকা। এক যুবক নেমে এসে সবিনয়ে জানতে চাইলেন, ‘কোথায় ওই নবীন সন্ন্যাসীর দেখা মিলবে?’ ঘাটের মানুষ জানালেন— পথের সব মানুষ যে দিকে চলেছেন, সেই পথেই তাঁর সাক্ষাৎ মিলবে।

ওই আগন্তুক যুবকটির নৌকো, মূল্যবান পোশাক, লোকলস্কর দেখে তাঁকে নিতান্ত সাধারণ বলে মনে হয়নি। সন্ধান পাওয়া যায় যে, অন্যতম প্রধান নৌ-বাণিজ্য কেন্দ্র সপ্তগ্রামের বিখ্যাত ধনী বণিক হিরণ্য গোবর্ধনের একমাত্র বংশধর ওই যুবক। তাঁদের বার্ষিক বাণিজ্যিক উপার্জন প্রায় বারো লক্ষ টাকা।ওই যুবক চৈতন্যদেবকে দেখে সম্মোহিত, সিদ্ধান্ত নিলেন সন্ন্যাস নেবেন। সে কথা চৈতন্যদেবের কানে পৌঁছতেই ফল হল উল্টো। তিরস্কার করে ফিরিয়ে দিলেন যুবককে। গোটা ঘটনার সাক্ষী থাকলেন চৈতন্য সখা নিত্যানন্দ। এরপর চৈতন্যদেব পুরী চলে গেলেন। অন্যদিকে বিষয়কর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন যুবক। বিয়ে দিয়েও সংসারে তাঁর মন ফেরানো গেল না!

এক বছর পরে পুরী থেকে নিত্যানন্দকে নাম প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে বঙ্গদেশে পাঠালেন শ্রীচৈতন্য। নিত্যানন্দ এসে উঠলেন সেই পণ্যহট্ট বা পানিহাটির রাঘবভবনে। নাম-সংকীর্তনের কাজ শুরু করলেন নিত্যানন্দ। পানিহাটিতে রোজই উৎসব। গঙ্গার পাড়ে এক বট গাছের তলায় নিত্যানন্দ কথা বলেন ভক্তদের সঙ্গে, কখনও কীর্তনের সঙ্গে নাচেন। পিছনে বসে এই সব ঘটনা প্রতক্ষ্য করেন ওই যুবক। একদিন তাঁকে ডেকে নিলেন নিজের কাছে। তারপর একদিন নিত্যানন্দ তাঁকে আদেশ দিলেন সমবেত ভক্তদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করতে। ধনী যুবক প্রত্যেক ভক্তের জন্য মাটির হাড়িতে পর্যাপ্ত চিড়ে দই ফলের আয়োজন করেন। দিনটি ছিল জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী তিথি। সেই থেকে বৈষ্ণব সমাজে দিনটি ‘দণ্ড মহোৎসব’ নামে পরিচিত। আর, সেই যুবক হলেন পরবর্তী কালের অন্যতম চৈতন্যপার্ষদ দাস রঘুনাথ। ধনী ভক্তকে দিয়ে নিত্যানন্দ অর্থদণ্ডের ছলে মহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন বলে এই উৎসবের নাম দন্ড মহোৎসব।

প্রতি বছর উক্ত তিথিতে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় পানিহাটিতে। বিতরণ করা হয় চিঁড়ে দই। এছাড়াও বিভিন্ন বৈষ্ণব মঠমন্দিরে উৎসব পালিত হয়। রঘুনাথ দাসের পর পানিহাটি নিবাসী রাঘব পণ্ডিত এই উৎসব করতেন। পরবর্তী কালে পানিহাটির সেন পরিবার এই উৎসব করে। একে অনেকেই চিঁড়ে-দধী মহোৎসবও বলে থাকেন, প্রায় পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই উৎসব চলে আসছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #Panihati, #dondo mahotsab

আরো দেখুন