মণিপুর এখনও জ্বলছে, এবার অশান্তির মেঘ জমছে BJP শাসিত ত্রিপুরায়
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ বিজেপি সরকারের মণিপুর জ্বলছে। এই অবস্থায় উত্তর-পূর্ব ভারতের আরেক ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ সরকারের রাজ্য ত্রিপুরায় অশান্তির মেঘ জমতে শুরু করেছে। যা নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা আবার বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড আন্দোলনকে জোরালো করার আহ্বান জানালেন। আগামী জুলাইয়ে তাঁর দল তিপ্রা মথা সর্বদলীয় সম্মেলন করে তাদের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দেববর্মা। বুধবার রাতে একটি অডিও বার্তায় এ কথা জানান তিপ্রা মথার প্রধান।
দেববর্মা বলেন, পুরো ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ১ হাজার ২০০ মানুষ আগরতলায় এসে দলের নেতাদের তাদের সমস্যার কথা জানাবে। দলের নেতারা তাদের কথা শুনবেন এবং একেবারে গ্রাম স্তর থেকে শুরু করে, পঞ্চায়েত এবং রাজ্যস্তরে নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে। পুরোনো কমিটির খোলনলচে বদলে ফেলা হবে।
মহারাজা দেববর্মা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় অসংখ্য মানুষ আমাদের পাশে ছিলেন। কিন্তু তাঁরা এখন বাড়িতে বসে রয়েছেন। এটা যাতে না হয়, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’ দেববর্মা জেলা স্তরের নেতা ও দলের বিধায়কদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, দলীয় কর্মীদের যাতে বুথ পর্যায় সক্রিয় রাখা যায়, তা মাথায় রেখে কর্মসূচি নিতে হবে। তিপ্রা মথা নেতা আরও বলেন, ‘একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, বৃহত্তর ত্রিপুরা রাজ্য গঠনের দাবির কথা শুনে মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই দাবি থেকে সরে এসে আমরা আপস করতে পারি না।’
নির্বাচনের পর তিপ্রা মোথার পৃথক ও বৃহত্তর আদিবাসী রাজ্যের দাবি খতিয়ে দেখতে এবং আলাপ-আলোচনা করতে অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এ কে মিশ্রকে নিয়োগ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আগরতলায় গিয়ে দেববর্মার সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল মিশ্রর।
দেববর্মা বলেন, মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে এ আলোচনা পিছিয়ে গেছে। এ আলোচনা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের নতুন পৃথক রাজ্যের আন্দোলনের রাজনীতি কোন দিকে গড়ায়, জুলাইয়ে তিপ্রা মোথার ‘প্লেনারি’ বৈঠকে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে তিপ্রা মথা ১৩টি আসন পায়। ভোট পায় প্রায় ২০ শতাংশ।
ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপির তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে তারা নির্বাচনে তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ উপজাতীয় দল তিপ্রা মথাকে মন্ত্রিসভায় আনতে আগ্রহী হয়। সে সময় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে প্রয়োজনে তিপ্রা মথার সঙ্গে কাজ করতে বিজেপির কোনোই সমস্যা নেই।
বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, ‘ত্রিপুরা রাজ্য ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু উপজাতীয় মানুষের সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন এবং এই লক্ষ্যে ত্রিপুরা সরকার ও কেন্দ্র সরকার একযোগে কাজ করবে। প্রয়োজনে তারা তিপ্রা মথার সঙ্গেও কাজ করবে, কোনোই সমস্যা নেই।’
বিশ্বশর্মার এ বক্তব্যের পর তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোৎ দেববর্মণ বলেছিলেন, ‘আমরাও তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমরা সাংবিধানিক সমাধান চাই। আমরা ভূমিপুত্র। আমাদের যদি সম্মান দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমরা অবশ্যই যাব। কিন্তু শুধু যদি কতগুলো পদ অলংকৃত করতে বলা হয়, তবে আমরা তা করব না। শুধু পদ অলংকৃত করার জন্য তিপ্রা মথার জন্ম হয়নি, আমাদের সাংবিধানিক সমাধানসূত্র প্রয়োজন। ত্রিপুরার মূলবাসীদের বাদ দিয়ে রাজ্য চালানো খুব সহজ কাজ হবে না।’
উল্লেখযোগ্য বিষয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মণিপুর সফরের শেষ দিনে পৃথক রাজ্যের দাবি তুললেন দেববর্মা। বছর দুয়েক আগে এক নতুন স্বপ্ন দেখানোকে হাতিয়ার করে, তার উপযোগী ছকে রাজনীতির ঘুঁটি সাজিয়ে, ত্রিপুরায় আমূল পরিবর্তনের জোরালো ‘হাওয়া’ তৈরির প্রয়াসী হন রাজপরিবারের বংশধর ও আদিবাসী/জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের বুবাগ্রা (রাজা) প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মন। মাত্র দেড় বছর আগে তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়নাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা নামে এক দল তৈরি করে, ত্রিপুরার ভূমিপুত্রদের দাবিদাওয়াকে লগ্নি করে ‘মাঠে’ নেমে পড়েন।
আদিবাসীদের সত্তাপরিচিতিভিত্তিক রাজনীতির কারণে বিভিন্ন সময়ে উত্তাল হয়েছে ত্রিপুরা। প্রচুর রক্তও ঝড়েছে। ফের সেরকমই ঘটতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।