বইয়ের নামে রাস্তা! বিশ্বকে পথ দেখিয়েছিল কলকাতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বইয়ের নামে রাস্তার নাম, হ্যাঁ কলকাতায় তাও আছে। শুধু তাই নয়! বইয়ের নামে যে রাস্তার নাম হতে পারে, সেই পথ বিশ্বকে দেখিয়েছে কলকাতাই। বিশ্বকোষ লেন, কী আছে এই রাস্তার নেপথ্যে? কলকাতাই চিনিয়ে দিয়েছিল যদি বিখ্যাত ব্যক্তির নামে রাস্তার নাম হতে পারে, তাহলে কেন তাঁদের অমর সৃষ্টির নামে রাস্তার নাম হবে না!
বাগবাজারের কাঁটাপুকুর অঞ্চলে এলেই চোখে পড়বে বিশ্বকোষ লেন। প্রথম কোনও ভারতীয় ভাষায় লেখা এনসাইক্লোপিডিয়া হল এই বইটি। তার নামেই রাস্তার নাম। কাঁটাপুকুর বাইলেনে থাকতেন নগেন্দ্রনাথ বসু, যাঁর সঙ্গে বিশ্বকোষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
নগেন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬৬ সালে, তাঁর আদিবাড়ি হুগলির মাহেশে। নগেন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা বাগবাজারে চলে এসেছিলেন। বাগবাজারের বাড়িতেই থাকতেন নগেন্দ্রনাথ। ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, ইতিহাসচর্চা ছিল তাঁর সখ। উনিশ শতকে, তদানিন্তন সময় তিনি ছিলেন কলকাতার অন্যতম খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ। এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যও ছিলেন। তাঁর সংগ্রহে ছিল অসংখ্য পুঁথি, পাণ্ডুলিপি, তাঁর জ্ঞান অসীম।
বাঙালির জ্ঞান ভাণ্ডারকে ঋদ্ধ করতে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দায়িত্ব। বিশ্বে যা যা আছে সব কিছু জানাতে বাঙালিকে, এ জিনিস সর্বক্ষণ ভাবাত নগেন্দ্রনাথকে। বাংলা থেকে ইংরেজি অভিধান ‘শব্দেন্দু মহাকোষ’, ‘শব্দকল্পদ্রুম’ সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বাঙালিদের জন্য কিছু করবেন না! বাঙালির জন্য কিছু করতেই হবে, এ তাঁর দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল। অবশেষে ইচ্ছা পূরণ হল। ১৮৮৭ সালে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ‘বিশ্বকোষ’। বাংলার প্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া। ১৮৮৮ সালে, অর্থাৎ পরের বছরই বিশ্বকোষের দায়িত্ব পান নগেন্দ্রনাথ বসু। তারপর থেকে দীর্ঘ ২২ বছরের সাধনা, প্রায় ১৭ হাজার পৃষ্ঠার মোট ২২টি খণ্ড সংকলন ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়। সাধ পূরণ হল নগেন্দ্রনাথের। বাঙালির বিশ্বকোষ আর নগেন্দ্রনাথ হয়ে গেলেন সামর্থক।
এই অনন্য নজিরের স্মরণে তাঁর বাড়ির সামনের কাঁটাপুকুর বাই লেনের রাস্তারটির বদলে, ১৯১৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশন ওই রাস্তাটির নতুন নামকরণ করে ‘বিশ্বকোষ লেন’। ১৯৩৩ সালে ফের তিনি বিশ্বকোষের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁর আয়ু, তাঁর কাজের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কাজ অসম্পূর্ন রেখেই চলে যান নগেন্দ্রনাথ বসু।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ