বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি বিশ্বের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। কখনও অধ্যাপককে সাসপেন্ড করে দিচ্ছেন, তো কখন আবার ঢিল ছুঁড়ছেন পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে! বিতর্কে জড়িয়েছেন বারবার।
এবার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখলেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জর্জ আকেরলফের মতো ৩০০ জন বিশিষ্ট। এদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, নামীদামী প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা।
চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, রাজনৈতিক প্রভুকে তোয়াজ করার জন্যই বিশ্বভারতীর উপাচার্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে হেনস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁরা লিখেছেন, ভারতে এখন যে সরকার যলছে তাদের সঙ্গে অধ্যাপক সেনের মতাদর্শগত ফারাক রয়েছে। সেটাকে পুঁজি করেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিজেপিকে তুষ্ট করতে এ ধরনের আচরণ করে চলেছেন। তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসাবে আপনি উপাচার্যকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
বিশ্বের শিক্ষাক্ষেত্রে এই চিঠি আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। যাঁরা অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই বিদেশের। দেশেরও অনেকে রয়েছেন তাতে। ম্যাসচুসেটসের অর্থনীতির কিংবদন্তি অধ্যাপক জেমস কে বোয়েস, জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক জেনাইন রডগার্সের মতো শিক্ষাবিদ। আবার জেএনইউয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়কও আছেন তালিকায়।
শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীর ১৩ ডেসিমেল জায়গা নিয়ে মূল সংঘাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ওই জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতর থেকে রেকর্ড বের করে অমর্ত্য সেনের হাতে দিয়ে বলে এসেছেন, কোনও জবরদখল নেই।
এই নিয়ে অধ্যাপক সেন মামলা করেছেন বোলপুর কোর্টে। আগামী ১৩ জুন সেই মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখে বিদ্যুতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের আর্জি জানালেন বিশ্বের প্রায় ৩০০ অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ।
এর আগেও বিভিন্ন বিষয়ে দেশ, বিদেশের শিক্ষাবিদরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিথে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কিও সরব হয়েছিলেন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর অভিযানে সামিল হয়েছিলেন।
চলতি বছরের মার্চ মাসে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসবে যোগ দিতে বঙ্গে উড়ে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণের অভিযোগ তুলে, তাঁর অপসারণের দাবিতে খোলা চিঠি দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। তা লিখেছিলেন বিশ্বভারতীর একদল অধ্যাপক, আশ্রমিক, সমাজের বিশিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। কিন্তু কয়েকঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সেই চিঠির জন্য শাস্তির খাঁড়া নেমে আসে বিশ্বভারতীর ‘বিদ্রোহী’ অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে। ৭ জনকে শোকজ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।