সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বরখান গাজীর পুজো
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা বরখান গাজী। এই দেবতার নামের সাথে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন লোকগাথা। জল, জঙ্গলে মোড়া এই অঞ্চলের হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দারা এই পুজো উপলক্ষে একত্রিত হন। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন এই পুজোয়। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুরে আজও এই পীর বরখান গাজী পূজিত হন।
কথিত আছে, বর্তমান দক্ষিণ ২৪ পরগণার বেলে আদমপুর মতান্তরে বৈরাটনগর গ্রামে বরখান গাজীর জন্ম। জল জঙ্গলে মোড়া এই অঞ্চলের বাঘ, কুমীর, সাপ এবং অন্যান্য প্রাণীকে যখন ইচ্ছা বশ করতে পারতেন তিনি। কুমীরের দেবতা কালুগাজীর বন্ধু ছিলেন তিনি। জনশ্রুতি অনুযায়ী, সুন্দরবন এলাকায় বরখান গাজীর পুজো করলে বিপদের হাত থেকে নাকি রক্ষা পাওয়া যায়।
জীবদ্দশায় বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর সাথে বাঘের রাজা দক্ষিণরায়ের সঙ্গে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছিল। সেজন্য তাঁর সাথে আছে ঘোড়ার যোগ। এইজন্য বরখান গাজীর পুজো উপলক্ষে ঘোড়াছুটের আয়োজন করা হয়। যা, ঘোড়া ছুটের মেলা নামে পরিচিত। এই মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।
গাজীবাবার অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে নানা প্রবাদও প্রচলিত আছে এই এলাকায়। বৃষ্টি না হলে খরা মরশুমে বরখান গাজীর পুজো করলে বৃষ্টি নামে এলাকায়। গবাদী পশু এবং মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধি সারাতে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষজন শরনাপন্ন হন তাঁর কাছে। লোকের বিশ্বাস, বরখানগাজী একজন জাগ্রত পীর। এই বিশ্বাসে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর পুজো দেন।
সুন্দরবনের এই লৌকিক দেবতার পুজো আজও মিলিয়ে দেয় হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে। এই পুজো মানেই হাজার হাজার মানুষের বিশ্বাস ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন। যা দৃঢ় করে ঐক্য, গড়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির।