মেহুল, নীরব, বিজয় – ঋণখেলাপিদের সঙ্গে আপস করবে RBI? তোপ বিরোধীদের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিরোধীরা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ী তথা কর্পোরেটদের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। এবার ঋণখেলাপিদের জন্য আসরে নামলেন মোদী। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চাপ দিয়ে মোদী এবার নীরব মোদী, মেহুল চোক্সি, বিজয় মালিয়াদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে বলে অভিযোগ আনল বিরোধীরা।
আরবিআই সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, যারা নীরব মোদীর মতো ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বা যারা বিজয় মালিয়ার মতো ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করেনি, তাদের সঙ্গে আপস করতে পারবে ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক অফিসারদের সর্বভারতীয় সংগঠন ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন এর প্রতিবাদ সরব হয়েছে। তাদের বক্তব্য, এতে জনগণের আস্থা হারাবে ব্যাঙ্ক। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপিকে শিল্পপতিরা চাঁদা দেন। তাই তাঁদের সাহায্য করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে কর্পোরেটের ১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছে ব্যাঙ্ক। দেশের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকায় শীর্ষে মোদীর বন্ধু মেহুল চোকসি।
আরবিআইয়ের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে পরিশোধ না করা ঋণ বা প্রতারণার ফলে ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা আটকে রয়েছে। সেক্ষত্রে আপস করে কিছুটা অর্থ উদ্ধার করার উপায় খুঁজছে ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের পর্ষদকে এই বিষয়ে নীতি তৈরির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যত এতে ঋণখেলাপিদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এল বিজেপি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া নীতি অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া অর্থ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ নাও করেন, তাঁকে মীমাংসা বা নেগোসিয়েশনের সুবিধা দেওয়া হবে। সেই ব্যক্তি যদি ঋণের নামে প্রতারণা করেন, তাহলেও তাঁকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে না। এখানেই শেষ নয়, ব্যাঙ্ক চাইলে ঋণের অনেকাংশ মকুবও করে দিতে পারবে।
প্রতারক ঋণখেলাপিদের জন্য এহেন ছাড়ের কারণ কী? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। ৮ জুন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বোঝাপড়ার সূত্রপাতের ১২ মাস পর সেই ঋণখেলাপি ফের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের আবেদন করতে পারবে। শেয়ারবাজার ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বাণিজ্যও জন্য খুলে দিচ্ছে সরকার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০১৯ সালের প্রুডেনশিয়াল ফ্রেমওয়ার্ক ফর রেজলিউশন অব স্ট্রেসড অ্যাসেট নামক নির্দেশিকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাঙ্ককর্মীদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের উপরই বিপুল আর্থিক বোঝা চাপানোর ব্যবস্থা করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সাধারণ মানুষের জমা দেওয়া অর্থ থেকে কর্পোরেটরা ঋণ নেন। ঋণ শোধ না হলে, গ্রাহকের উপরেই মাশুল চাপিয়ে তা আদায় করা হবে। অল ইন্ডিয়া ন্যশনালাইজড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাসের কথায়, পাহাড় প্রমাণ অনাদায়ী ঋণের বোঝা থেকে দেড় লক্ষ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। সেই চেষ্টা গুরুত্ব হারাল। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টাপাধ্যায় বলছেন, যাঁরা কষ্ট করে ঋণের টাকা মেটান, আরবিআইয়ের এই সিদ্ধান্তে তাঁদের সদিচ্ছায় ভাটা পড়বে।