মল্লভূমের দেবী খচ্চরবাহিনী, শারদীয় নবমীতে পূজিতা হন মহামারীর দেবী
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মল্লভূমি বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজোয় পূজিতা হন লৌকিক দেবী খচ্চরবাহিনী। কামানের তোপের পর শুরু হয় নবমীর পুজো। নবমীর নিশুতি রাতে মহামারীর দেবী খচ্চরবাহিনীর আরাধনার রীতি রয়েছে মল্লরাজবাড়িতে। দেবীকে তুষ্ট করলেই নাকি মহামারী থেকে রেহাই মেলে।
কথিত আছে, মল্লভূমে যখনই মহামারীর প্রকোপ দেখা দিয়েছে, তখনই মহামারীর থেকে মল্লবাসীদের রক্ষা করেছেন দেবী খচ্চরবাহিনী। তিনিই মহামারী বা অতিমারীর দেবী। খচ্চরের ওপর অধিষ্ঠাত্রী হন দেবী, তবে দেবীর ভয়াল রূপ দর্শণ করা চলে না। তাই দেবীর অর্চনা করতে হয় পিছন ফিরে। দেবীকে তুষ্ট করলেই মেলে মহামারী থেকে মুক্তি।
৪৯তম মল্লরাজ, “বারো ভুঁইয়ার” অন্যতম মহারাজ বীর হাম্বীর এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। শোনা যায়, মহারাজ বীর হাম্বীর মধ্যরাত্রে প্রায়ই দুর্গ পরিদর্শন বের হতেন। কোনও এক রাতে তিনি দেখেন, এক রমণী খচ্চরের উপর আরোহণ করে দুর্গের অভ্যন্তর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছেন। গভীররাতে প্রহরীরা তখন নিদ্রায় আচ্ছন্ন। মহারাজ বার বার ওই রমনীর পরিচয় জানতে চাইলেও, রমনী খচ্চরে চড়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। রেগে গিয়ে রাজা রমণীর উদ্দেশ্যে একের পর এক তীর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। তীর গুলি একটাও রমণীর শরীরে না লেগে বিলীন হয়ে যায়। তিনি বিচলিত হয়ে স্মরণ করেন, কূলদেবী মৃন্ময়ীকে, তিনি দেখেন ওই রমণী অন্তর্হিত হয়ে গেছেন। অন্তঃপুরে ফিরে রাতে রাজা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। দেবী রাজাকে অভয় দিয়ে বলেন, খচ্চরবাহিনী ওই রমণী আদপে দেবীরই মহামারী রূপ। তিনি নগরভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।
মল্লভূমকে মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করতে, দেবী রজাকে মহানবমীর রাতে তাঁর পুজো করার আদেশ দেন। শারদীয় মহানবমীর গভীররাতে মহামারী দেবীর পট মূর্তি আনা হয় মৃন্ময়ী মন্দিরের গর্ভগৃহের পিছন দিকে। দুই ব্রাহ্মণ আর পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ এই পুজো থাকতে পারে না। এখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মহানবমীর নিশুতি রাতে একটি মাত্র প্রদীপ জ্বালিয়ে, ঘট ও পটে দেবীর আরাধনা করা হয়। পুরোহিত পিছন ফিরে পট পুজো করেন। ৫ পোয়া করে গোবিন্দভোগ চাল, মুগ ডাল ও দেশী ঘিয়ের সাথে কাঁচকলা, রাঙা আলু ও সৈন্ধব লবণ দিয়ে ভোগ তৈরি করে দেবীকে নিবেদন করা হয়। পুজো শেষে ব্রাহ্মণদ্বয় ও রাজপরিবারের সদস্যরা প্রসাদ গ্রহণ করেন এবং মধ্যরাতে সূর্যোদয়ের আগেই সমস্ত কিছু বিসর্জন করে, দেবী পট ফের রাজ-অন্তঃপুরে রেখে আসা হয়।