Manipur: ‘পরিস্থিতি কার্যত লিবিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া ও সিরিয়ার মতো’
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মণিপুর পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। এরই মধ্যে প্রাক্তন এক সেনা কর্মকর্তা মণিপুরের পরিস্থিতিকে উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার সংঘাতদীর্ণ রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ব্যক্তির বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যে ক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনায় রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে অন্তত দুজন আহত হয়েছেন। বিজেপি নেতাদের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
শুক্রবার রাত থেকে একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটে। ইম্ফলে উন্মত্ত জনতা রাজপরিবারের সংরক্ষিত ‘কাংলা ফোর্ট’–সংলগ্ন ভবনগুলোয় অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। স্থানীয় পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড অবশ্য কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরিয়ে দেয়। প্রাসাদ ও ভবনগুলো অক্ষত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইম্ফল পশ্চিম জেলার ইরিংবাম থানায় হামলা হয়েছে। তবে কোনো অস্ত্র খোয়া যায়নি। চূড়াচাঁদপুর জেলার কাংভাই অঞ্চলে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ধারাবাহিক গুলির শব্দ শোনা গেছে। বিষ্ণুপুর জেলার কয়াক্টা থেকেও গুলির শব্দ শোনা গেছে।
আরেক ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিতের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স অবশ্য জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গতকাল রাতে জনতা ইম্ফল পূর্ব জেলার সিনজেমাইতে বিজেপির কার্যালয় ঘেরাও করে। সেখান থেকেও জনতাকে সরিয়ে দেয়। একইভাবে গতকাল মধ্যরাতে ইম্ফলের পোরামপেটের কাছে বিজেপি (মহিলা) সভাপতি সারদা দেবীর বাড়িতেও দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। তাদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, অ্যাডভান্স হাসপাতালের সামনে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয়। ১ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীর দল এলাকায় জড়ো হয়ে ভাঙচুর শুরু করে। পরিস্থিতি সামলাতে যৌথ বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রবারের বুলেট ছোঁড়ে। এছাড়াও মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় বিধায়কের বাড়ি।
সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারল এল নিশিকান্ত সিং। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আমি একজন সাধারণ ভারতীয়। মণিপুরে অবসর যাপন করছি। এই রাজ্যে এখন শুধুই নৈরাজ্য। এখানে পরিস্থিতি কার্যত লিবিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া ও সিরিয়ার মতো। যে কোনও মুহূর্তে ধনেপ্রাণে মারা পড়তে হবে। মনে হচ্ছে মণিপুরকে একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কি শুনছেন?’
কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে এখনও পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ভাঙচুর করা হয়েছে ধর্মীয় স্থান, স্কুলবাড়ি, সরকারি অফিসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্ফু জারির পাশাপাশি নামানো হয় সেনাকে।
দীর্ঘ হিংসার প্রভাব পড়েছে রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কার্যকলাপে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন। হিংসা শুরু হওয়ার পর থেকেই সহস্রাধিক পুলিশকর্মী কাজে আসেননি। এ বার তাঁদের কাজে ফেরাতে স্থানীয় স্তরে আবেদন জানাতে শুরু করল সরকার। সরকারের বক্তব্য, ‘যেখানে নিরাপদ মনে করেন, সেখানেই কাজে যোগ দিন!’
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এই হিংসার জেরেই মণিপুর পুলিশের ১২০০ কর্মী, আধিকারিক নিজেদের ডিউটিতে যোগ দিতে নারাজ। কোনওভাবেই তাঁরা উপদ্রুত এলাকায় ডিউটি করবেন না বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে৷ রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে এই ১২০০ পুলিশ কর্মীকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে, এমনকি তাদের পছন্দ মতো জায়গায় ডিউটি দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু তারপরেও গোটা রাজ্যের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে এই পুলিশ কর্মীরা নিজেদের কাজে যোগ দিতে তীব্র অনীহা প্রকাশ করেছেন বলে মণিপুর পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে৷
অগ্নিগর্ভ মণিপুরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে যখন সবথেকে বেশি পুলিশ ফোর্স প্রয়োজন, ঠিক সেই সময়েই ১২০০ পুলিশ কর্মীর অনুপস্থিতির খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও, এমনই দাবি সরকারি সূত্রের৷ কিভাবে গোটা পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তা ভেবে দেখার জন্য রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের মৌখিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নয়াদিল্লির তরফে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীরা কেউ কুকি, আবার কেউ মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত। কিন্তু বাহিনীতে তাদের এই পরিচয় গণ্য হয় না। সংঘর্ষের সময় সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রয়োজনীয় এলাকায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ। তাতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন মণিপুরের পুলিশকর্মীদের একটি অংশ। তাই নিজেদের এলাকায় ফিরে নিরাপদ থাকতে চাইছেন তাঁরা।