দেশ বিভাগে ফিরে যান

যে কারণগুলির জন্য অবশেষে মণিপুর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বাধ্য হল কেন্দ্র

June 23, 2023 | 3 min read

যে কারণগুলির জন্য অবশেষে মণিপুর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বাধ্য হল কেন্দ্র

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরে জাতিগত হিংসা নিয়ে আলোচনা করতে ২৪ জুন একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকটি হবে নয়াদিল্লিতে।

মণিপুরের একাধিক বিরোধী দল শুধু নয়, বিজেপির বিধায়কেরা পর্যন্ত দিল্লি গিয়ে ধর্ণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সাড়া পাননি।

মণিপুর ৩ মে থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং রাজ্যের বাসিন্দারা বারবার কেন্দ্রীয় সরকারকে হিংসা দমনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।

কিন্তু মণিপুর প্রশ্নে এখনও পর্যন্ত নীরব থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর চলাকালীন ওই দেশে বসবাসকারী কুকি এবং মেইতিরা ওয়াশিংটন ডিসি-তে বিক্ষোভ দেখাবে বলে ‘ডেকান হেরাল্ড’ রিপোর্ট করেছে। উত্তর আমেরিকার কুকি-জোমি জনগণের সমন্বয়ে গঠিত মণিপুর ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশন, এবং আমেরিকার অ্যাসোসিয়েশন অফ মেইতিস, মণিপুরের হিংসা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সরব।

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তাদের একটি প্রতিবেদনে বলেছে, মণিপুরের থাউবাল জেলার থউবলা অপুনবা লুপের সংগঠনের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা আন্তর্জাতিক যোগ দিবস বয়কট করে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা পোড়ায়, যখন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রসংঘে যোগ দিবস পালন করছিলেন।

বুধবার (২১জুন) গভীর রাতে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র দপ্তর টুইট করে জানায়, ২৪ জুন শনিবার সর্বদলীয় বৈঠক হবে। বুধবারই বেশি রাতে দিল্লিতে তলব করা হয় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে। তিনি প্রথম থেকেই মণিপুর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। বেশি রাতে তিনি দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর বৈঠকের দিনক্ষণ জানানো হয়। শনিবার বিকাল ৩’টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে এই বৈঠক হবে।

আবার এই বুধবারই, বিষ্ণুপুর জেলায় একটি আইইডি বিস্ফোরণে আট বছর বয়সী এক বালক এবং দুই কিশোর আহত হয়েছে বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। কাংপোকপি জেলার দুটি গ্রামেও ‘নির্বিচারে’ গুলি চালানো হয়েছে।

ইতিমধ্যে, রাজ্যে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, যেখানে বিরোধী নেতারা এবং বাসিন্দাদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী সহিংসা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷

এরই মধ্যে হঠাৎ মায়ানমারের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করে মণিপুর সরকার। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীরা গ্রাম গড়ে তুলেছেন বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মায়ানমারের প্রায় দু’হাজার নাগরিক ভারতীয় ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু এই রিপোর্ট ঘিরে জোর তরজা শুরু হয়েছে। কুকি জনজাতি গোষ্ঠীর অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার নামে আদতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি করছে। প্রশ্ন উঠছে, আইজিপি কর্তৃক জমা দেওয়া রিপোর্টটি কীভাবে প্রমাণ করে যে রাজ্যে জাতিগত হিংসা মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুতদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল? রিপোর্টে তা স্পষ্ট নয়।

জাতি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুরে শান্তির জন্য আবেদন করলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এরাজ্যের হিংসার ঘটনাকে তিনি ‘হৃদয় বিদারক’ বলে বর্ণনা করেন। বুধবার এক ভিডিওবার্তায় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সৌভ্রাতৃবোধ গড়ে তোলার ডাক দেন। এদিনই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগ দাবি করে সিপিএম সহ বাম দলগুলি। তৃণমূল কংগ্রেসও প্রথম থেকেই মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিকে চিঠি দেন অবিলম্বে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য। কমিটির চেয়ারম্যানকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নি।।

বিশেষজ্ঞদের মতে চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বাধ্য হল মোদী সরকার। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরেও এই বিষয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তাই তরিঘরি এই বৈঠক ডাকা হল। যেখানে এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে একটি শব্দ‍ও খরচ করেন নি! এছাড়াও আর কিছুদিন পর সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে। সে সময় বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে সরকার পক্ষকে। ফলে সব মিলিয়ে কৌশলে সর্বদল বৈঠক ডেকে রাজনৈতিক ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। তবে অনেকে বলছেন, সর্বদল বৈঠক ডেকে মণিপুর নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা কার্যত মেনে নিল কেন্দ্র।

গত ৩ মে থেকে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মে মাসেই মণিপুর সফরে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মণিপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি-সহ অন্যান্য তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ থামানোই উদ্দেশ্য ছিল তাঁর। মণিপুর সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সিবিআই তদন্তেরও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শাহের সফরের পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনও ঘরছাড়া ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। গোষ্ঠীহিংসার জেরে নিহত ১১৫ জন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Manipur Polls, #Manipur burning, #Manipur violence, #Manipur

আরো দেখুন