দেশ বিভাগে ফিরে যান

অসমের কামাখ্যা মন্দিরে চলছে অম্বুবাচীর মেলা এবং উৎসব

June 25, 2023 | 2 min read

কামাখ্যা মন্দিরে চলছে অম্বুবাচীর মেলা
ছবি সৌজন্যে nativeplanet.com

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: চলছে অম্বুবাচী তিথি। তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠস্থান হল গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির। ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম এই মন্দিরে চলছে অম্বুবাচী মেলা এবং উৎসব। তিথি চলাকালীম, কামাখ্যা মন্দির এবং নীলাচল পাহাড়ে তিল ধারণে জায়গা থাকে না। চলতি বছরে অম্বুবাচী শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার, ৬ আষাঢ়) ভোর রাত ২টো ৩২ মিনিটে। শেষ হবে ২৬ জুন, সোমবার অর্থাৎ আগামীকাল দুপুর ২টো ৫৬ মিনিটে। আগামীকাল সকালে নিবৃত্তি এবং নিত্যপুজার পরে কামাখ্যা মন্দিরের দরজা আবার খোলা হবে। প্রবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় পুজো।

মেলা উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা ও নজরদারির ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। ভক্তদের বিশ্রাম নেওয়া জন্য অনেকগুলি ক্যাম্প করা হয়েছে। ৯০০ এনসিসি, স্কাউটকে নিয়োগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী এবং প্রায় ৪০০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লক্ষ ভক্ত এসেছেন অম্বুবাচী মেলায়।

উর্বরতার দেবী বা রক্ষাকারী দেবী হলেন মা কামাখ্যাকে। অসমের কামাখ্যা মন্দির একান্নটি সতীপীঠ ও চারটি আদি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর লেখাতেও উল্লেখ রয়েছে কামাখ্যা মন্দিরের। কামরূপ রাজ্যের বর্মণ রাজবংশের শাসনকালেও এই মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। সেই সময় বহুবার ধ্বংস হতে হয়েছিল এই মন্দিরকে। কালাপাহাড় প্রথম এই মন্দির ধ্বংস করেছিল। হুসেন শাহ যখন কামতা রাজ্য আক্রমণ করেছিল। তখন কামাখ্যা মন্দির ধ্বংস করেছিল। তারপর কোচ রাজবংশের রাজারা আবার পুনর্নির্মাণ করেন ‘কামাখ্যা মন্দির’।

প্রাচীনকালে খাসি উপজাতি বাস করতেন এই অঞ্চলে। তাঁরাই এখানে পশুবলি দেওয়া শুরু করেছিলেন। বর্তমানে পশুবলি দেওয়ার সংখ্যা আগের তুলনায় কমে গিয়েছে। কালিকা পুরাণ অনুসারে ‘মা কামাখ্যা দেবীর’ উপাসনা করলে সব ইচ্ছা পূরণ হবে। প্রত্যেক বছর অম্বুবাচী মেলা অনুষ্ঠানে, মনসা পূজা ও দূর্গাপূজার সময়ে প্রচুর মানুষ আসেন এই মন্দিরে। অম্বুবাচী আসলে, উর্বরতার অপেক্ষা। দেবীরূপে নারী, মাটিরূপে মা-দুইয়েরই জন্য থাকে এই অপেক্ষা। অম্বুবাচী হল দেবী শক্তি এবং ধরিত্রীমায়ের ঋতুদর্শন বা ঋতুকালীন উৎসব। 

সাধারণ দৃষ্টিতে এবং প্রথাগত ধারণায় নারীকে ঋতুকালে যেভাবে কোথাও কোথাও এখনও অস্পৃশ্য ভাবা হয়, সংসারের কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, শতখানেক বছর আগেও তাকে এই সময় যেভাবে আলাদা ঘরে নির্বাসনে রাখা হত, ঋতুধারা সমাপ্ত হলে নির্বাসনমুক্ত হয়ে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে নৈমিত্তিক সংসারের কাজে পুনরায় বহাল হতে হত; এই ঋতুকালে সেবায়েতদের কাছে, ভক্তদের কাছে তেমনই বৈষম্যমূলক ব্যবহার পান দেবী শক্তি, আর কৃষকের কাছে পান মা ধরিত্রী। এই বৈষম্যকেই আড়াল করা হয় ‘উৎসব’ বা ‘পার্বণ’ নাম দিয়ে। অম্বুবাচীর বিধিনিষেধ চলে চার দিন ধরে। ঋতুস্নানের পর নারী যেমন সন্তানধারণের জন্য প্রস্তুত হন, তেমনি দেবী প্রস্তুত হন নতুন সৃষ্টির জন্য, ধরিত্রী প্রস্তুত হন নতুন ফসলের জন্ম দিতে। দেবী ও ধরিত্রী দুজনেই অনন্ত যৌবনা, জনন-সক্ষমা।

কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে শিব যখন প্রলয়নাচন নাচছিলেন, তখন তাঁকে শান্ত করার জন্য সতীকে শিবের কাঁধ থেকে বিযুক্ত করার প্রয়োজন পড়ল। বিষ্ণু সেই কাজের ভার নিয়ে সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ক্রমাগত খণ্ডবিখণ্ড করতে লাগলেন। তাতে খণ্ড হল, একান্নটি। আর সেই খণ্ডগুলোই যেখানে যেখানে পড়ল, সেখানে সেখানে গড়ে উঠল এক একটি সতীপীঠ। ধীরে ধীরে সেগুলো পরিগণিত হতে শুরু করল জাগ্রত শক্তিপীঠ হিসেবে।

ব্রহ্মপুত্ররতীরে নীলাচল পাহাড়ের উপর কামাখ্যা মন্দির অবস্থিত, সেখানে দেবী সতীর যোনি পতিত হয়েছিল। যোনি পতিত হয়ে পরিণত হয়েছিল শিলায়। গড়ে উঠেছিল তীর্থ। সেই তীর্থ উদ্ধার করে দেবীর প্রথম মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন পৌরাণিক অসুররাজ নরকাসুর। তারপর সেই মন্দির রাজরাজড়ার যুদ্ধে বেশ কয়েকবার ভেঙেছে, অনেকবার তৈরি হয়েছে। ১৫৬৫ সালে কোচ রাজা নরনারায়ণ মন্দির গড়েছিলেন বলে জানা যায় প্রচলিত ইতিহাস থেকে। অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে কামাখ্যায় যে মেলা বসে তারও ইতিহাস এই সময় থেকেই মেলে। মেলাটির বয়স পাঁচশো বছরের বেশি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kamakhya temple

আরো দেখুন