বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

#Exclusive ‘বাপি দা’-র স্মৃতিচারণায় রূপম ইসলাম

June 25, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রয়াত হয়েছে মহীনের ঘোড়াগুলির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাপি দাস, সকলের বাপিদা। বাংলার রক সঙ্গীতের এ সময়ের অন্যতম পথিকৃৎ রূপম ইসলাম, প্রয়াত বাপি দাসের স্মৃতিচারণা করলেন। ভাগ করে নিলেন তাঁদের প্রথম সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা। জানালেন শেষ দেখার কথাও। দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষ থেকে রূপম ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন মধুরিমা রায়।

দৃষ্টিভঙ্গি: বাপিদার সঙ্গে প্রথম অভিজ্ঞতা কেমন?

রূপম ইসলাম: বাপিদা অত্যন্ত ভদ্রলোক একজন মানুষ। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় জেন্টলম্যান। বাপিদা আমাকে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন প্রথম। এবং সেটা এতোই কুন্ঠা নিয়ে, যে আমিই অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছি। অস্বস্তিতে পড়বারই তো কথা, অত সিনিয়র একজন মানুষ। তিনি বলছেন তুমি ব্যস্ত শিল্পী। তোমার সঙ্গে কথা বলে আমি তোমার সময় বেশি নিতে চাই না। সংক্ষেপে বলব, ইত্যাদি। এইভাবে কথপোকথন শুরু হয়। আমি তাঁকে অশ্বাস্ত করি যে আমি তাঁর শিষ্য স্বরূপ। তাঁর সঙ্গে কথা বলা আমার সৌভাগ্য। তিনি ফোন করেছেন, এটা আমার সৌভাগ্য। এই বোধটায় পৌঁছতে কিন্তু বাপিদার অনেকটা সময় লেগেছিল। উনি বিশ্বাসই করেননি যে আমি সেভাবে তাঁকে দেখি। কিন্তু যখন বিশ্বাস করতে পেরেছেন তখন প্রচুর কথা হয়েছে। উনি ফোন করে মিউজিকে আমার কন্ট্রিবিউশনটাকে অ্যাকনলেজ করতেন। ফসিলসের গানবাজনা, ফসিলসের কনসার্টগুলো অ্যাটেন্ড করে, তা নিয়ে লেখা। এবং জোরালো কণ্ঠে বলা যে বাংলা রক বলতে উনি ফসিলসই বোঝেন, অন্য কিছু না। রকের মধ্যে যে এলিমেন্ট রয়েছে, সেই এলিমেন্ট বাংলা গানে একমাত্র ফসিলসের মধ্যেই আছে- এইটা উনি বারবার বলতে চাইতেন। আর কী বলতে চাইতেন, সেটা আমি বলব না। সেটা জানতে ওঁর নিজের লেখা পড়তে হবে। বারবার প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন জায়গায় মতামত, ফসিলসের মেজর কনসার্টগুলোতে তাঁর উপস্থিতি অনিবার্য ছিল এবং তাঁর পাশাপাশি রূপম ইসলাম একক; আমার একক অনুষ্ঠানে তিনি একেবারে নিয়মিত হয়ে যান। প্রত্যেকটা একক অনুষ্ঠানে এসেছেন, প্রত্যেকটা অনলাইন অনুষ্ঠান দেখেছেন। প্রত্যেকটা নিয়ে লিখেছেন। লিখে আবার আমাকে ফোন করে বলতেন, আমি এরকম একটা লিখছি তোমার কী কোনও আপত্তি থাকবে। আমি বলতাম আপত্তি কিসের! এ তো আমার সৌভাগ্য। এরকমই জেন্টলম্যান ছিলেন।

খুব সতর্কভাবে পদচারণা করতেন, যে কেউ আবার বিরক্ত হচ্ছে না তো; এই একটা বোধ তাঁর মধ্যে সব সময় ক্রিয়াশীল দেখেছি। যা খুবই অনন্য। (which is very unic) তাঁর যে আত্মমর্যাদার বোধটা এটাই। আত্মমর্যাদার বোধ অত্যন্ত প্রবল না হলে কেউ এটা করতে পারে না। এটা আসছে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর যে পদার্পণ, সেটা তো শুধু সাংস্কৃতিক ব্যাপার নয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক তার একটা আবহ আছে। সেই আবহ তাঁরা নান্দনিক উৎকর্ষের জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, সেই আবহের প্রতিক্রিয়া। এটাই হচ্ছে তাঁদের মাহাত্ম্য। মহীনের ঘোড়াগুলির প্রথম সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন বাপিদা। সেই জায়গা থেকে তিনি একজন নমস্য ব্যক্তিত্ব। তারপরেও তিনি যেভাবে আমার মতো একজন নবীন শিল্পীকে, তাঁর কাছে তো নবীনই হব, তিনি যেভাবে সম্মান দিয়েছেন এবং যেভাবে তিনি বারবার বলেছেন, লিখেছেন যে আমাদের কী অবদান। কোন জায়গায় অন্য কেউ কিছু করেনি আমরা করেছি, সেটাও তিনি মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করেছেন। তাঁর মত সেটা আমার মত না। একক অনুষ্ঠান দেখার পর লেখায় লিখেছেন, বাংলা যদি শিখতে হয় রূপম ইসলামের কাছেই যেতে হবে। লেখার পর অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। তারও সমুচিত জবাব দিয়েছেন। এরকম যোদ্ধা মানুষ ছিলেন বাপিদা।

দৃষ্টিভঙ্গি: বাপিদার সঙ্গে শেষ যেদিন কথা হয়েছে সেদিন তাঁর স্বপ্ন, তাঁর ভাবনা কতটা বলেছিলেন আপনাকে?

রূপম ইসলাম: শেষ যেদিন কথা হয়েছিল হাসপাতালে, বাপিদা গান শুনতে চেয়েছিল। আমি গিটার নিয়ে গান গাইতে গেছিলাম। অনেক গান শুনিয়েছি বাপিদার ঘরে বসে। প্রায় নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। কিন্তু ফিসফিস করে আমাকে বলল, এরপরে আমার (বাপি দাস) বাড়িতে আরও বড় করে তোমার গানের অনুষ্ঠান হবে। তুমি আসবে।

আমি বললাম, আমি এখানেও আসবো। যখনই মনে হবে গান শুনতে ইচ্ছে করছে, তুমি বলো। গিটার নিয়ে আমি চলে আসবো।

আমার বই গান সমগ্র দুইয়ের ভূমিকা লিখছিলেন বাপিদা। সেটাও বলল, ওটা আমি বাড়ি ফিরে শেষ করবো। আমাদের একটা সাক্ষাৎকার গ্রহণ চলছিল। আমি বাপিদার বিরাট একটা সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম, তারও শেষ পর্ব শেষ করবার কথা ছিল।

বাপিদা শেষ অবধি বিশ্বাস করে গেছে যে, এই যুদ্ধটা বাপিদা জিতবে। সহজে জিতবে এবং বাড়ি ফিরবে। অবলীলায় জিতবে, এরকম একটা টেম্পারামেন্ট আমি বাপিদার কাছ থেকে দেখেছি সব সময়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mohiner ghoraguli, #Bapi Das, #Rupam Islam

আরো দেখুন