অগ্নিশ্বর মুখোপাধ্যায় থেকে অশোক গুপ্ত, কেমন ছিলেন বাংলা ছবির চিকিৎসকরা?
সৌভিক রাজ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলা ছবির কাহিনীর অংশ হিসেবে বারবার উঠে এসেছেন ডাক্তারবাবুরা। সপ্তপদী আদ্যন্ত রোমান্টিক ছবি হলেও ছবির বিরাট অংশজুড়ে ডাক্তার, ডাক্তারির অধ্যয়ন। আনন্দ আশ্রম, পিতা পুত্র-র মতো ফ্যামিলি ড্রামার ছবিরও মূল উপাদান হয়ে উঠেছে ডাক্তার। লেডি ডাক্তার, চন্দ্রমল্লিকা, শুধু তোমার জন্য-র মতো খাঁটি বাণিজ্যিক ছবির কাহিনীর অনুষঙ্গে এসেছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও ছোটখাটো দৈর্ঘ্যের চরিত্রে প্রায় প্রতি সিনেমাতেই ডাক্তারবাবুরা এসেছে। কিন্তু কাহিনীর অংশ হিসেবে নয়, কেবল ডাক্তারকে নির্ভর করে তৈরি হওয়া বাংলা ছবির সংখ্যাও কম না।
কাঁচের স্বর্গ: ১৯৬২ সালের ছবিটি যাত্রিক গোষ্ঠীর একেবারে প্রথম দিকের সিনেমা। যাত্রিকের অন্যতম সদস্য, শচীন মুখোপাধ্যায় চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। অভাবের তাড়নায় ডাক্তারির পড়া না শেষ করতে পারা, এক মেধাবী ছাত্র; চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ডাক্তারি শুরু করে এক হাসপাতালে। উদ্দেশ্যে একটু ভালভাবে ভরপেট খেয়ে বাঁচা। এগোয় গল্প। চিকিৎসক হিসেবে সুনাম অর্জন করেও, শেষটায় ধরা পড়ে যান তিনি। বিকাশ রায়, ছায়া দেবী, পাহাড়ি সান্যাল, অনিল চ্যাটার্জীদের পাশাপাশি নজর কেড়ে ছিলেন শচীনবাবু।
অগ্নিশ্বর: সত্তরের দশকের এ ছবি আজও এক মাইলফলক। এমন ব্যক্তিপূর্ণ বাঙালি চরিত্র, সচরাচর বাংলা ছবিতে দেখা যায় না। কাহিনীকার বনফুল, নিজের এক শিক্ষকের ছায়ায় চরিত্রটি গড়েছিলেন। ছবির কাহিনীকার নিজেও চিকিৎসক ছিলেন, ছবির পরিচালক সেও ছিলেন ডাক্তারির ছাত্র, ফলে ছবি নির্মাণে যেন বাড়তি যত্ন চোখে পড়ে। উত্তমকুমারের অন্যতম সেরা অভিনয় হিসেবে বিবেচিত হয় ছবিটি।
গণশত্রু: সত্যজিতের একেবারে শেষ দিকের ছবি। এলাকার মানুষের মঙ্গল করতে গিয়ে শত্রুতে পরিণত হন চন্ডিপুরের চিকিৎসক অশোক গুপ্ত। ধর্মের বেসাতিতে আঘাত পড়লে যে কী হয়, তা বেশ ফুটিয়ে তুলেছিলেন মানিকবাবু। প্রায় নয়ের দশকের ছবি, ফলে সমসাময়িক সময়ে সত্যজিতের রাজনৈতিক চিন্তাও ধরা পড়ে ছবিতে। চিকিৎসকের ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় ছিল সাবলীল। সন্দীপ রায়ের উত্তরণও চিকিৎসকের কাহিনীই ছিল, প্রত্যন্ত গ্রামে কুসংস্কারের দৌরাত্ম্য বিরুদ্ধে লড়া এক ডাক্তারের কাহিনী।
জীবন নিয়ে খেলা: অঞ্জন চৌধুরীর সিগনেচার ছবি জীবন নিয়ে খেলা। গ্রাম বাংলার হলে সিটি আর হাততালি পড়া ছবি যেমন হয়, ঠিক তেমনই একটি ছবি। নয়ের দশকে সৎ, আদৰ্শবাদী রঞ্জিত মল্লিককে যেমনভাবে দেখতে বাংলার দর্শকরা অভ্যস্ত ছিল, এ ছবিতেও সেই এক রঞ্জিত মল্লিকে দেখেছিলেন বাংলার মানুষ। ডাক্তার শুভঙ্কর সান্যাল চরিত্রটি আজও বাংলা ছবির সেরা চিকিৎসকদের তালিকায় থাকবে।
অলীক সুখ: শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা রায়ের ছবি অলীক সুখ। আজকের দিনে ডাক্তারদের জীবন কেমন? চেম্বার, সার্জারি, হাসপাতাল, নার্সিং হোমে বন্দি তাঁদের জীবন, শুধুই সুখের জন্য ছুটে চলা। কেবল উপার্জনের জন্য ডাক্তারি করা, মহত্ম নয়! মহানুভবতা নয়! আর পাঁচটা পেশার সমতুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ডাক্তারি। আজকাল রোগীর কেবল চিকিৎসা হয়, নিরাময় নয়? এক অদ্ভুত প্রশ্ন তুলেছিল ছবিটি। চিকিৎসকের ভূমিকায় দেবশংকরের অভিনয় ছিল আকর্ষণীয়।