টেরাকোটার পীঠস্থান বিষ্ণুপুরের শতাব্দী প্রচীন মদনমোহন মন্দির
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পোড়ামাটির দেশ বলা হয় বিষ্ণুপুরকে। সেই সঙ্গে এটি বাংলার প্রসিদ্ধ পর্যটন স্থলও। এখানে টেরাকোটার কারুকার্য খচিত প্রাচীন স্থাপত্য, মন্দির, পোড়ামাটির ঘোড়া বাংলার এক গৌরবময় যুগের ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে। এখানে দেখতে পাওয়া যায় মাটি দিয়ে বানানো ইট, সেই ইট আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করে ছিলেন টেরাকোটার আশ্চর্য সব মন্দির। সেই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটায় নকশা করা রাম রাবণের যুদ্ধ-সহ নানা পৌরাণিক কাহিনি। এই সব মন্দিরগাত্রে ফুটে ওঠে প্রাচীন জীবনযাত্রার ছবি ও আশ্চর্য কারুকাজ।
বিষ্ণুপুরে নজর কাড়ে একটি প্রাচীন কামান, যার নাম দলমাদল বা ‘দল মর্দন’। অর্থাৎ বর্গী দলকে মানে বর্গীর দলকে মর্দন বা বিনাশ করে যে কামান। জনশ্রুতি এই কামান চালিয়েছিলেন স্বয়ং মদনমোহন (শ্রীকৃষ্ণের আর এক রূপ)। শোনা যায়, বাংলায় বর্গী হামলা আটকাতে তিনিই নাকি কামান চালিয়েছিলেন।
কথিত আছে, সেই সময় বিষ্ণুপুর ছিল বীর মল্লরাজাদের রাজভূমি। অষ্টাদশ শতকে বর্গী হামলায় সময় মল্লরাজাদের সেনাবাহিনী হামলাকারীদের আক্রমণের সামনে পিছু হটতে থাকে। মল্লরাজ গোপাল সিংহদেবের পরাজয় যখন নিশ্চিত, তখন মদনমোহনের মন্দির থেকে স্বয়ং ভগবান বেরিয়ে এসে বর্গীদের লক্ষ্য করে কামান চালিয়েছিলেন। আর তাতে মনোবল বেড়ে যায় মল্লরাজার সৈন্যদের। তাঁরা ফিরে এসে বীরবিক্রমে এমন যুদ্ধ করেন যে ভাস্কর রাওয়ের নেতৃত্বে বর্গীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
জানা গেছে, মল্লরাজা বীর হাম্বীর মল্লদেব মদনমোহনের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে মল্ল রাজা দুর্জন সিংহ দেব ১৬৯৪ সালে ভগবান মদন মোহনের নামে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মদনমোহন মন্দিরে প্রবেশের পুরনো পথ টেরাকোটা দোচালা স্টাইলের। মন্দিরটি একরত্ন। বিষ্ণুপুরের বেশিরভাগ মন্দিরেই এখন আর বিগ্রহ নেই। তবে এই মন্দিরে এখনও দে’বেলা নিত্য় পুজো হয়।
এই মন্দিরটির ছাদ চৌকো ও বাঁকানো। মন্দির বা দুর্গের কিনারা বাঁকযুক্ত ও মাঝখানে গম্বুজাকৃতি শীর্ষ বর্তমান যা সম্পূর্ণ পোড়া মাটির তৈরী। এরকম শক্ত এবং দৃঢ় স্থাপত্য খুবই কম চোখে পড়ে। মন্দিরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ১০ মিটারেরও বেশি। মন্দির গাত্রে বিভিন্ন স্থাপত্যের মাধ্যমে কৃষ্ণলীলা ও কৃষ্ণের দশ অবতারের পৌরাণিক কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে।