আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

গণবিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগে জ্বলছে ফ্রান্স, কেন এমন পরিস্থিতি?

July 1, 2023 | 2 min read

গণবিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স
ছবি সৌজন্যে timesofisrael

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গণবিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স। গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি ফ্রান্সে। বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে রাজধানী প্যারিস সহ প্রায় গোটা ফ্রান্স। বিভিন্ন শহরে টানা প্রায় ৪দিন ধরে প্রতিবাদ। ‘দ্য পুলিশ কিলস’ স্লোগান তুলে শয়ে শয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। বিপুল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বিক্ষোভ। উত্তেজিত জনতা বহুতলের কাচ, গাড়ি ভাঙচুর থেকে শুরু করে সরকারি অফিস কাছারিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।

বিক্ষোভ, ইটবৃষ্টি, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত মঙ্গলবার থেকেই দফায় দফায় উত্তাল হয়েছে ফ্রান্সের রাজপথ। গণবিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। ইতিমধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৯২টি সরকারি ভবন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ২ হাজারেরও বেশি গাড়ি। মার্সেই শহরে আন্দোলনকারীদের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে বিশাল এক গ্রন্থাগারও।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই দেশজুড়ে ৪৫ হাজার আধাসেনা মোতায়েন করতে হয়েছে। অন্তত ৪০ হাজার পুলিশ নামানো হয়েছে এই দাঙ্গা পরিস্থিতি দমন করতে। প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০০ জন পুলিশ অফিসার। শুধু প্যারিসেই মোতায়েন করা হয়েছে ৫ হাজার আধাসেনা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজপথে নেমেছে সশস্ত্র সাঁজোয়া গাড়ি। তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

কেন ফ্রান্সে ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি?

বৈষম্য নিয়ে মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত রাগের বহিঃপ্রকাশ বলছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। জানা গিয়েছে, প্যারিসের উপকণ্ঠের মফস্বল শহর নানতের। সেখানে মায়ের সঙ্গে থাকত আলজেরিয়ার বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের তরুণ নাহেল। গত মঙ্গলবার ট্রাফিক স্টপে তার গাড়ি আটকায় পুলিশ। সেই সময়ে পথ চলতি এক ব্যক্তি গোটা ঘটনাটা ভিডিও রেকর্ড করে নেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটা থামিয়ে দুই পুলিশ অফিসার মাথা ঝুঁকিয়ে কথা বলছেন। একজনের হাতে রয়েছে একটি পিস্তল। তার পর হঠাৎই ওই অফিসার গুলি করে দেন নাহেলকে।

ফ্রান্সের জনতার অভিযোগ, জাতিগত পক্ষপাতে করেছে ফরাসি পুলিশ। সাদা চামড়ার ফরাসি নাগরিকদের থেকে আলজেরিয়া, মরক্কো থেকে আসা উদ্বাস্তু বা কৃষাঙ্গ ফরাসিদের প্রতি পুলিশের আচরণে বৈষম্য রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব মুসলমানদের উপর অনেক বেশি অত্যাচারী ফরাসি পুলিশ। প্যারিসের আলজেরিয়ান, মরক্কো উদ্বাস্তুদের বক্তব্য, ফ্রান্সের সাদা চামড়ার নাগরিকদের আলজেরিয়ার উপর অত্যাচারের ঔপনিবেশিক মানিসকতা এখনও যায়নি। সেই কারণেই বিনা কারণে পুলিশ ১৭ বছরের এক তরতাজা ছেলেকে গুলি করে মেরে দিয়েছে।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাঁক্রো। ১৭ বছরের তরুণকে গুলি করে মারার ঘটনার নিন্দা করেছেন তিনি। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে ২ কিশোরকে গুলি করে মেরেছিল ফরাসি পুলিশ। এর প্রতিবখাদে ৩ সপ্তাহ ধরে চলেছিল দাঙ্গা। এবার যাতে তেমন পরিস্থিতি না হয় সেজন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মাঁক্রো প্রশাসন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#france

আরো দেখুন