সাড়ে ৫০০ বছর ধরে চলে আসছে শান্তিপুরে মহিষখাগী পুজো
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মা কালীর আরেক অসামান্যা রূপ হলো মহিষখাগী। শান্তিপুর তথা নদীয়ার প্রাচীন কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম পুজো এটি। শান্তিপুরের চৈতলপাড়া ও ভবানী পাড়ার মাঝামাঝি অবস্থিত মা মহিষখাগীর মন্দির। ইতিহাস বলছে, ১২৩৮ বঙ্গাব্দে এ মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। কথিত আছে, আনুমানিক সাড়ে পাঁচশো বছর আগে কোনও এক তান্ত্রিক পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতে করতে মায়ের দর্শন পান। সেই থেকে শান্তিপুরে মহিষখাগী কালী পুজোর প্রচলন হয়।
মহিষ খাগী নামকরণের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গোপন ইতিহাস। স্বপ্নে নাকি দেবী ওই তান্ত্রিককে মহিষের রক্ত দিয়ে তাঁকে পুজোর নির্দেশ দেন। তা থেকেই তাঁর নাম ‘মহিষখাগী’। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এক সময় মহিষ বলি দিয়ে পুজো শুরু হতো মায়ের। কিন্তু কোনও এক বছর পুজো হবার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বলি আর হয়ে ওঠেনি। সেই থেকেই মায়ের পুজোয় বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, এক বার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ৮টি মহিষ বলি দিতে এসেছিলেন মায়ের কাছে। সেই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যায়। তাই পুজোকে দুই পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথম পর্বে ছিল বলির আগে পর্যন্ত পুজো। আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল বলির পরবর্তী সময়ে পুজো। সকালে পান্তাভাত এবং খয়রা মাছের রান্না দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়।
মহিষখাগী পুজোর বৈশিষ্ট্য হল এখানে বিয়ের রীতি মেনে পুজো হয়। মহালয়ার দিন পাটে সিঁদুর পরে। এরপর শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। গোটা দুর্গা পুজোর সময় ধরে গড়ে ওঠে মহিষখাগীর প্রতিমা। উচ্চতায় এ মূর্তি প্রায় ১০ ফুট। প্রথম পাটে ওঠানোর দিনে থাকে বিভিন্ন নিয়মরীতি। পাটে ওঠানোর পর মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সেই দিনই ভোররাতে দধিমঙ্গল হয়। অমাবস্যা শুরু হলে বিয়ের রীতি মেনে পুজো। পরের দিন বাসি বিয়ের রীতিতে পুজো। পুজো শেষে কাঁধে করে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা।
স্বপ্নাদেশ পাওয়া ওই তান্ত্রিকের মৃত্যুর পর স্থানীয় একটি ব্রাহ্মণ পরিবার এই পুজো চালিয়ে নিয়ে যান। ওই পরিবারের একমাত্র কন্যার মৃত্যুর পর পুজোর ভার নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজও চলছে সেই পুজো।