বিদেশে বাংলার শিল্পীদের হেনস্থায় সোশ্যাল মাধ্যমে সঙ্ঘবদ্ধ বিদ্বজনদের প্রতিবাদপত্র
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মার্কিন মুলুকে আটলান্টাতে আয়োজিত হয়েছিল এবছরের নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স বা বঙ্গ সম্মেলন। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি চলেছিল ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত। এতে অংশগ্রহন করে বাঙালি শিল্পীরা। কিন্তু তাঁরা চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী জয়তী চক্রবর্তীরা একের পর এক ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। এছাড়াও বঙ্গ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলার একগুচ্ছ সঙ্গীতশিল্পী ও নাট্য ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের প্রায় সকলকেই হেনস্থার শিকার হতে হয়।
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলার শিল্পীরা একজোট হয়ে একটি প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, বাংলার সব শিল্পী আজ সিএবি’র যে কোনও অনুষ্ঠান নিয়ে চূড়ান্ত আতঙ্কিত,অপমানিত। তাই একজোট হয়ে তাঁরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সিএবি’র স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, ইমন চক্রবর্তী , রূপম ইসলাম, রূপসা দাসগুপ্ত, দেবজ্যোতি মিশ্র, শ্রীজাত, সুবোধ সরকার, বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়, কুমার মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়তী চক্রবর্তী, উপল সেনগুপ্ত, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, সৌমিত্র মিত্র, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, সোমলতা আচার্য্য চৌধুরি, উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়, গৌরব গৌরব সরকার, নীলাঞ্জন ঘোষ, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, জয় সরকার, রথীজিৎ ভট্টাচার্য, প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, রাহুল দাস, দেব চৌধুরী, শ্রীকান্ত আচার্য্য, নীল দত্তর মতো শিল্পী ও বিদ্বজ্জনেরা।
অজয় চক্রবর্তী – অজয় চক্রবর্তী উদ্যোক্তাদের একটি ইমেল করেছেন, যা সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল। তাঁর অভিযোগ,
“আমি ভাবিনি সেখানে আমাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা থাকবে না ৷ দুপুরের খাবার আসবে বিকেল 4টের সময় ৷ হোটেলের ঘরেও ঢুকতে পারিনি আমরা ৷ বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের ৷ প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী যেখানে আমাকে এত সম্মান দেন, সেখানে আমার মতো একজন প্রবীণ শিল্পীকে নিয়ে গিয়ে এমন অপমান করা হল ৷ আমার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাইনি ৷”
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়: অজয় চক্রবর্তীর সমর্থনে বঙ্গ সম্মেলন আয়োজকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তিনি তাঁর নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “ভারতের সিনিয়র-মোস্ট কিংবদন্তি শিল্পীকে যদি এমন চিঠি লিখতে হয়,তাহলে বেঙ্গলি কনফারেন্স করে লাভ কী? এই অসম্মানটুকু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রাপ্য বুঝি !! বাঙালি আর কত নীচে নামবে ?”
জয়তী চক্রবর্তী: শিল্পী জয়তী চক্রবর্তী ফেসবুক লাইভে উদ্যোক্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ৷ তিনি বলেছেন, “অভীক দাশগুপ্ত শিল্পীকে শিল্পী বলে মনেই করেন না ৷ তিনি ভাবছেন, আমাদের বঙ্গ সম্মেলনে নিয়ে গিয়ে টাকা দিয়ে ধন্য করে দিচ্ছেন ৷ মিনিমান ভদ্র ব্যবহার, সম্মান আমরা শিল্পীরা আশা করি ৷ অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করা হয়েছে ৷ আমারা পৌঁছে ১২-১৪ ঘণ্টা কোনও খাবার পাইনি ৷ অনেক শিল্পীকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি, মাইক টেস্ট করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকী এখনও অনেক শিল্পী নিজেদের প্রাপ্য টাকাটাও পাননি ৷ আপনারা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর লেখা দেখেছেন ৷ নিজের চোখে গুরুজির যে অসম্মান দেখলাম সেটা মেনে নিতে পারছি না ৷”
মার্কিন মুলুকে চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও হেনস্থার প্রতিবাদে অনেক শিল্পী বঙ্গ সম্মেলন বয়কটের কথা ভাবছেন ৷ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বাঙালি শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেটিজেনরাও।