রাজ্যে অন্যতম শক্তিপীঠ লাভপুরের প্রাচীন ফুল্লরা মন্দির
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি:
‘অট্টহাসে ওষ্ঠ পাতো দেবী সা ফুল্লরা স্মৃতা।
বিশ্বেশো ভৈরব স্তত্র সর্বাভীষ্ট প্রদায়ক।।’
৫১ সতী পীঠের অন্যতম পীঠ হল বীরভূমে লাভপুরের মা ফুল্লরা। পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে, এখানে দেবী সতীর ঊর্ধ্ব ওষ্ঠ পড়েছিল।
তন্ত্রচূড়ামণিতে একান্ন পীঠের ৪৯ তম পীঠ লাভপুরের ফুল্লরা। প্রতি বছর মাঘ পূর্ণিমায় ত্রয়োদশী তিথিতে মায়ের বিশেষ পূজা অর্চনা হয়।
মায়ের ভোগে থাকে, মাছ, মাংস ডাল দু রকম সবজি টক, পাঁচ রকম ভাজা ও অন্যান্য সামগ্রী।
লাভপুরের চারদিক গাছপালায় ঘেরা। মন্দিরটি বেশ একটা ছায়াময় পরিবেশ। লোকালয় থেকে একটু দূরে দেবী ফুল্লরার মন্দির। এখানে মা, ব্রহ্মশিলাতে পূজিত হন।
মন্দির চত্বর খুব প্রশস্ত নয়। গর্ভগৃহের সামনে রয়েছে নাট মন্দির। জগমোহনে রয়েছে হাড়ি কাঠ।
জানা যায়, নন্দগিরি মহারাজ কেদারনাথ থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে লাভপুরে এসেছিলেন। তখন এই এলাকা গভীর জঙ্গলে ঢাকা। সেখানেই জঙ্গলের ভিতরে খুঁজে পেয়েছিলেন শিলাখণ্ড। তারপর সেখানেই তৈরি হয় মন্দির।
বীরভূম জেলার এই জায়গা প্রাচীনকালে অট্টহাস নামে পরিচিত ছিল। চণ্ডীর ব্যাখ্যায় রয়েছে, অসুর নিধনে দেবীর আবির্ভাব হওয়ার পর তিনি অট্টহাসিতে আকাশ বিদীর্ণ করছেন। অশুভের নিধনে শুভ শক্তির জয়োল্লাস।
এই মন্দিরের পাশে, একটি বিরাট পুকুর আছে। কিংবদন্তি অনুসারে, রামের দুর্গাপূজার সময়, ‘হনুমান’ এই পুকুর থেকেই ১০৮টি পদ্ম সংগ্রহ করেছিলেন।
জানা যায়, সুলতান মাহমুদ গজনভির ভারত আক্রমণের সময়, একদল বেদানুসারী ব্রাহ্মণ, ‘মিথিলা’ মতান্তরে ‘কনৌজ’ থেকে বিতারিত হয়ে, বঙ্গদেশের ‘বর্মণরাজ, ‘হরি বর্মার’ কাছে, আশ্রয় লাভ করেন। তাঁরাই এই দেবীর পুজো করতেন। পরবর্তী সময়ে ফুল্লরা দেবীর মন্দির প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন ‘কৃষ্ণানন্দ গিরি’।
জানা যায়, একসময় মন্দিরের চূড়ায়, ‘স্বর্ণকলস’ শোভা পেত। মাঘী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে প্রাচীনকালে কৃষ্ণনন্দ গিরি মহারাজ মায়ের বিশেষ কৃপা লাভ করেছিলেন।
দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন মায়ের কাছে পুজো দিতে। লোক বিশ্বাস, দেবীর কাছে ভক্তিভরে প্রার্থনা করলে তা পূরণ হয়। পুজোর বিশেষ দিনে উপচে পড়ে ভিড়, বসে মেলাও।