জানেন কী হাওড়ার হাজার হাতের কালীর ইতিহাস?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: অসুর নিধনের জন্য আদি শক্তি মা কালী নানা রূপে অবতীর্ণ হয়েছে। মা কালীর যে রূপ সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে হাওড়াতে বিরাজমান মা কালী। এখানে মা কালীর হাজারটা হাত।
হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলের ওলাবিবিতলা থেকে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া যায় হাজার হাত কালী মন্দির। শতাব্দী প্রাচীন এই দেবীর নামেই জায়গার নামও হয়ে গিয়েছে হাজার হাত কালীতলা।
চণ্ডীপুরাণ থেকে জানা যায়, অসুর নিধন করার সময় দেবী মহামায়া একাধিক রূপ ধারণ করেন। তার মধ্যে হাজার হাত বিশিষ্টা রূপ অন্যতম। সিংহের ওপর আসীন দেবী নীলবর্ণা এবং রীতিমত ভয়ঙ্করী। এই মূর্তির উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। মায়ের দেহ সংলগ্ন বিশালাকৃতির বাম হাতে রয়েছে খড়্গ আর ডান হাতে পঞ্চশূল। বাকি ৯৯৮টি হাত অবশ্য খুবই ছোট। দেবী সর্বদা লালপেড়ে সাদা শাড়ী পরিহিতা। তাঁর দুই কাঁধে দুটি সাপ ফনা তুলে থাকে। আর মাথার ওপর রাজচ্ছত্র। তবে দেবীমূর্তির চমকপ্রদ একটি বিশেষত্ব হল, দেবী কিন্তু লালজিহ্বা নয়।
শোনা যায়, ১৮৮০ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তান্ত্রিক ভক্ত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তবে ইচ্ছা থাকলেও সেই সামর্থ্য ছিল না তাঁর। মন্দির তৈরিতে আগ্রহী হয় জনৈক হালদার পরিবার ও এলাকার মানুষজন। সবার ইচ্ছাতেই তৈরি হয়ে যায় হাজার হাত কালী মায়ের এই মন্দির। বৌদ্ধ পূর্ণিমাতে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। মন্দিরে নেই বলিদানের প্রথা।
মন্দির নিয়ে একাধিক কিংবদন্তি প্রচলিত। শোনা যায়, কৃষ্ণা সুব্রহ্মণ্যম নামক জনৈক দক্ষিণ ভারতীয় একবার শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার এই মন্দিরে এসেছিলেন। তিনি দৃষ্টিহীন ছিলেন। তাই মা কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন। সেই থেকেই মনে করা হয়, এই হাজার হাত মা কালী খুবই জাগ্রত। ভক্তিভরে কেউ কিছু চাইলে তিনি কখনওই ফিরিয়ে দেন না। জনশ্রুতি, মায়ের হাজার হাত গুনতে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি, মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
এই মন্দিরে মায়ের নিত্যপুজো হয়। নিয়মিত আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে মায়ের পুজোয় দূর দূরন্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয়। তবে বুদ্ধ পূর্ণিমায় মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস ও কালীপূজা এই ২ দিন বিশাল ধুমধাম কর মায়ের পূজা হয়।