গানের জন্য সারাজীবন আক্ষেপ ছিল কানন দেবীর
কানন দেবীর শিল্পী-জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ বোধহয় গানের প্রতি সময় দিতে না পারা। ওনার সঙ্গীত শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছে শৈশবেই, বাড়ির কাছেই থাকা ‘ভোলাদা’র কাছে। পরে ওস্তাদ আলারাক্কা, পঙ্কজ মল্লিক, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, আখতারী বাঈ, ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র, দিলীপ রায়, নজরুল ইসলাম প্রমুখ দিকপালের কাছে।
সিনেমার জগতে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ ছবিতেই তাঁর প্রথম গান রেকর্ডিং। কানন দেবীর সঙ্গীত প্রতিভা কেমন, তা বোঝা যায় দুই দিকপাল রাইচাঁদ বড়াল ও পঙ্কজ মল্লিকের সূত্রে। ‘বিদ্যাপতি’ ছবির গানের রেকর্ডিং হবে। গান গাইবেন কানন। রাইবাবু বললেন, ‘মাত্র চারটে চান্স দেব।’ তা আর দরকার হল না, দুটো চান্সেই পাশ করলেন কানন।
ছবির নাম ‘মুক্তি’। সংগীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক। তাঁর তত্ত্বাবধানেই কানন এই প্রথম সিনেমায় গাইলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। বাঙালির হৃদয় জয় করল সে গান। তাঁর কণ্ঠে ‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে’, ‘সেই ভালো সেই ভালো’, ‘আমি বনফুল গো’, ‘কুঁচবরণ রাজকন্যার মেঘবরণ কেশ’, ‘প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম’ প্রভৃতি গান পাড়ায় পাড়ায় জনপ্রিয় হল। পঙ্কজবাবু কাননদেবী সম্পর্কে মূল্যায়ন করলেন, ‘ফার্স্ট সিঙ্গিং স্টার অব নিউ থিয়েটার্স।’
কিন্তু যে সঙ্গীতের সূত্রে খ্যাতি-পরিচয় মিলল, সেই গানই এক দিন ছেড়ে গেল কাননকে। কেন? অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় লিখছেন, ‘গানের জন্য বাড়িতে তাঁকে এত অসম্মানিত হতে হয়েছে যে, অভিমান করে তিনি গান গাওয়াটাই ছেড়ে দিয়েছেন।’ যদিও কাননের নিজের মত, ‘পরবর্তী জীবনে গানকে সাধনা হিসেবে নেওয়ার মতো সময় ছিল না। তাই আমি নই, গানই অভিমান করে সরে গেল।’
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, লেখক: অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়