৫০০ বছরেরও ওপর বাংলায় পালিত হচ্ছে মহাকালীর জন্মদিন, দর্শন করবেন কীভাবে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাগনানের খালড়ের মহাকালী, যেখানে আছে ইতিহাসের ছোঁয়া। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ৩২ আষাঢ় এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দিনটিতে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের সংক্রান্তির দিন ধুমধাম করে জন্মদিন উৎসব পালন হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
হাওড়া জেলার বাগনানে ৫০০ বছরেরও বেশি পুরাতন খালোড় মহাকালী মন্দিরে সোমবার পালিত হল মহাকালীর জন্মদিবস। এই উপলক্ষ্যে আলোয় আলোয় সেজে উঠেছিল মন্দির চত্বর। পুজোকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ভক্তদের মধ্যে ভিড় ছিল চোখে দেখার পড়ার মত। পুজোর সন্ধ্যায় মন্দির চত্বরে মাটির প্রদীপ ও মোমবাতির আলোয় ভরিয়ে দিয়েছিল স্থানীয় মহিলারা। কালীপুজোর দিনেও মহা সমারোহে ভক্তিভরে পুজো অর্চনা চলে সারারাত ব্যাপী।
ইতিহাসের পাতায় উঁকি দিলে দেখা যাবে, মোঘল সম্রাট আকবরের প্রধান মন্ত্রী আবুল ফজল ইবন মুবারক তাঁর রচনায় খালড়ের উল্লেখ করেছেন। সেই প্রসঙ্গে চলে এসেছে মহাকালীর প্রসঙ্গও। তিনি আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে তৎকালীন হাওড়ার এই অঞ্চলকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সময় হাওড়া ছিল বর্ধমানের রাজাদের জমিদারী। প্রথম কালীপুজোর সূচনা করেছিলেন মহারাজা কন্দর্প নারায়ণ রায়। তারপর ৮ ফুটের দক্ষিণাকালীর মৃন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা শুরু হয়। ১২৯৫ বঙ্গাব্দে সেই প্রতিমা নষ্ট হয়ে গেলে একটি দারুমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
জনশ্রুতি, ২য় মূর্তিটিও বিনষ্ট হয়ে গেলে শ্যামপুর নিবাসী দারু শিল্পী গণেশ চন্দ্র মণ্ডল ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তারপর একটি মাত্র নিম কাঠের সাহায্যে মন্দিরের বর্তমান মূর্তিটি নির্মাণ করেন। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ৩২ আষাঢ় সেই মূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা হয়। তারপর থেকে পুজিতা হয়ে আসছেন এই মূর্তির দেবী।
বাগনান রেলস্টেশন থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বাগনান-শ্যামপুর রোডের উপরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির চত্বরে বিশাল নাটমণ্ডপের পাশে দুটি আটচালা মন্দিরে দেবীর ভৈরব বানলিঙ্গ ও মৃত্যুঞ্জয় শিব প্রতিষ্ঠিত। মহাকালী মন্দিরের পশ্চিমে অবস্থিত একদালান মন্দিরে অসংখ্য কূর্মমূর্তি-সহ ধর্ম দেবতা অধিষ্ঠিত। এই মন্দির চত্বরে মায়ের জন্মদিন ছাড়াও ভাদ্র ও পৌষ মাসের অমাবস্যা তিথিতে তালকালী ও মুলোকালীর মেলা বসে। এই মেলা উপলক্ষ্যে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষের সমাগম হয় মন্দির চত্বরে।