মুছে যাচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট নাম? কেন্দ্রের ইচ্ছায় ইতিহাস হারানোর পথে বারাকপুর?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বারাকপুর থেকে উঠেছিল ব্রিটিশ বিরোধী সিপাহি বিদ্রোহের ডাক। সালটা ১৮৫৭, গঙ্গার পাড়ের ছোট্ট শহর বারাকপুর সাহেবদের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল। ক্যান্টনমেন্টে জ্বলে ওঠা বিদ্রোহের আগুনে দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলন। ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যু বরণ করেছিলেন মঙ্গল পাণ্ডে। সিপাহি বিদ্রোহের জন্মভূমি থেকে মুছে যেতে চলেছে ক্যান্টনমেন্টের নাম। মোদী সরকারের ইচ্ছেয় মর্যাদা হারানোর পথে স্বাধীনতার ইতিহাস। নাম বদলের খবর প্রকাশ্যে আসতেই হতবাক গোটা শহর। বারাকপুরের নাগরিকরদের বক্তব্য, ক্যান্টনমেন্টের নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বারাকপুরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টিও অচিরেই মুছে যাবে।
মোদীর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় ভাট সোমবার রাজ্যসভায় জানিয়েছেন, দেশের সমস্ত ক্যান্টনমেন্টগুলিকে মিলিটারি স্টেশনে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে, তাদের সরকার। এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই আরম্ভ হয়েছে জল্পনা। জানা গিয়েছে, বারাকপুরসহ দেশের ৫৮টি ক্যান্টনমেন্ট মিলিটারি স্টেশনে বদলে যাবে। বাংলাসহ গোটা দেশে বিভিন্ন রাজ্যে ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে। এইসব এলাকার বসবাসকারীদের স্থানীয় পুরসভার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। চলতি বছরের এপ্রিলে হিমাচল প্রদেশের এক ক্যান্টনমেন্টের নাম বদলে মিলিটারি স্টেশন করা হয়েছে। এবার বারাকপুরবাসীর আশঙ্কা, বারাকপুরেরও নাম বদল হবে।
সাধারণ নাগরিকদের মতে, বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট নামের সঙ্গে সুদীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ১৭৬৫ সালে গঙ্গার পাড়ে ক্যান্টনমেন্ট তৈরি হয়। প্রচলিত ইতিহাস বলে, এটিই দেশের প্রথম ব্রিটিশ ক্যান্টনমেন্ট। সবচেয়ে পুরনোও বটে। আজও গোটা এলাকাজুড়ে প্রাচীন ইতিহাসের ছাপ বর্তমান। গভর্নমেন্ট হাউস, লেডি ক্যানিংয়ের সমাধি, মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসির জায়গা সব মিলিয়ে ইতিহাস যেন জীবন্ত এই জনপদে। এই ইতিহাস, ঐতিহ্য বাংলা তথা গোটা দেশের গর্ব।
বাংলাবাসী তথা বারাকপুরবাসীর দাবি, মিলিটারি স্টেশন হোক, তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট নামটি বদল করা চলবে না। পুরনো নামটি রাখতেই হবে। ইতিহাস ও মানুষের আবেগকে নিয়ে মোদী সরকারের ছেলেখেলা তাঁরা মানবেন না বলেই জানাচ্ছেন।