এখনও মণিপুর-সংক্রান্ত আলোচনা নেই সংসদে! অথচ পাস হচ্ছে একের পর এক বিল
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বৃহস্পতিবার, সংসদের বাদল অধিবেশনে মণিপুর ইস্যুতে আরেকটি উত্তপ্ত দিনের সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। আজ রাজ্যসভায় একদিকে বিজেপি সাংসদরা ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান তুলেছিলেন। অন্যদিকে বিরোধীরা ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ স্লোগান তুলেছিলেন।
মণিপুরের মানুষের পাশে দাঁড়াতে এদিন সংসদে কালো পোশাক পরলেন বিরোধী সাংসদরা। ইন্ডিয়া জোটের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সাংসদ বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে কালো পোশাক পরে উপস্থিত হন। প্রসঙ্গত, মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে বারবার সরব হয়েছেন বিরোধীরা। একাধিকবার অচল হয়েছে বাদল অধিবেশন। বৃহস্পতিবারও বেলা দু’টো পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয় দুই কক্ষের অধিবেশন। পরে দুই কক্ষই এদিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যায়।
মণিপুর ইস্যুতে বিরোধীদের স্লোগানের মধ্যেই এদিন জন বিশ্বাস বিল, ২০২৩ লোকসভায় পাস হয়ে যায়। রাজ্যসভা পাস হয় সিনেমাটোগ্রাফি(সংশোধনী)বিল, ২০২৩।
এদিকে মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনায় সরকারের অনাগ্রহের কারণেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। বিরোধীদের এই কৌশল স্পষ্ট। বিরোধী নেতারাই তা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে সম্ভবত এটাও স্পষ্ট, সরকার মণিপুর নিয়ে সদস্যদের কোনো লিখিত প্রশ্নের উত্তরও দিতে রাজি নয়। অধিবেশনের এক সপ্তাহ কেটে গেলেও রাজ্যসভায় মণিপুর-সংক্রান্ত একটি প্রশ্নও লিখিত আকারে উঠে আসেনি। ২০ জুলাই সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত একবারও মণিপুর-সংক্রান্ত একটি প্রশ্নও জবাব দেওয়ার জন্য প্রশ্নপত্রের লিখিত তালিকায় স্থান পায়নি। ওই রাজ্যের পরিস্থিতির বিচারে এটি নিতান্তই বিস্ময়কর! অভিযোগ বিরোধীদের।
লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রতিদিন প্রশ্নকাল নির্দিষ্ট থাকে। দুই কক্ষেই এক ঘণ্টা সময় থাকে সদস্যদের প্রশ্ন ও মন্ত্রীদের জবাবের জন্য। সদস্যরা যেসব প্রশ্ন দুই কক্ষের সচিবালয়ে জমা দেন, সেগুলো লটারি করা হয়। প্রতিদিন ২০টি করে প্রশ্ন দুই কক্ষে লিখিত তালিকায় স্থান পায়। প্রশ্নোত্তর পর্বে সেই প্রশ্নগুলোই বিবেচিত হয়। এসব প্রশ্নের উত্তরের পিঠে সদস্যরা সম্পূরক প্রশ্নও করতে পারেন। লটারিতে স্থান না পাওয়া অন্য প্রশ্নগুলোর লিখিত উত্তর প্রতিদিন সভায় পেশ করা হয়। এই এক সপ্তাহে মণিপুর নিয়ে একটি প্রশ্নও তালিকাভুক্ত হয়নি! যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
মণিপুর নিয়ে সংসদে সরকারকে জবাবদিহিতে বাধ্য করতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা গ্রহণ করেছেন। সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা কবে কতক্ষণ ধরে হবে, তা তিনি ঠিক করবেন। সরকারের বিরুদ্ধে আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার পর ভোটাভুটিতে হেরে যাবেই। কিন্তু তা জেনেশুনেও এই প্রস্তাব পেশের উদ্দেশ্য একটাই, সংসদ থেকে ‘পালিয়ে বেড়ানো’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মণিপুর নিয়ে আলোচনায় বাধ্য করা। যেসব বিষয়ে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করবেন, সেগুলোর জবাব দিতে বাধ্য করা।
সংসদের রেকর্ডে দেখাচ্ছে, ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী এযাবত মোট সাতবার বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথামাফিক পাঁচবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবে অংশ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। অন্য দুটির একটি রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা-সংক্রান্ত। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
অন্যটি ২০১৯ সালে যখন ওম বিড়লা লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হন। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। এর বাইরে মোদী একবারের জন্যও সদস্যদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।