দেশ বিভাগে ফিরে যান

মণিপুরের ঘটনাকে ধামাচাপার চেষ্টা? সুপ্রিম রায়ে মুখ পুড়ল মোদী সরকারের

August 1, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: অন্য রাজ্যের কথা টেনে মণিপুরের ঘটনাকে বিচার করা যায় না। একটি মামলার শুনানিতে এমনটাই জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। মোদী সরকারকে ভর্ৎসনা করে তিনি বলেন ‘দেশের সর্বত্র মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ হচ্ছে, এই তত্ত্ব খাড়া করার কোনও যৌক্তিকতা নেই। অন্য রাজ্যে কী হচ্ছে, তা দেখিয়ে মণিপুরের ভয়াবহ ঘটনা ঢাকা যায় না। প্রশ্ন হল, মণিপুর নিয়ে আপনারা কী করেছেন? আপনারা কি বলতে চাইছেন, দেশের সব মেয়েকে বাঁচাতে হবে। না হলে কাউকে বাঁচাব না! এটা যুক্তি?’

মণিপুরে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানোর ঘটনায় নতুন একটি আবেদন করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দুই নির্যাতিতা। অন্য দিকে সুপ্রীম কোর্টের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, সিবিআই তদন্ত ৬ মাসের মধ্যে শেষ করা এবং এই ঘটনার তদন্তপ্রক্রিয়া অন্যত্র সরানোর যে আর্জি কেন্দ্র জানিয়েছিল, তা সোমবার শুনবে তারা। এই মামলার শুনানিতেই এক আইনজীবী পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজস্থানের নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। কিন্তু মণিপুরের ঘটনার চরিত্র আলাদা বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

এই প্রসঙ্গে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের তরফে পেশ করা হলফনামার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ওই হলফনামাই বলছে, এই ধরনের বহু ঘটনা সে রাজ্যে ঘটেছে।” অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তিনি জানতে চান, গত ৩ মে সে রাজ্যে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর নারী নির্যাতনের কতগুলি অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছে। নির্যাতিতাদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, “সরকারের কাছে এই নিয়ে কোনও তথ্য নেই। তাঁরা যে সিবিআই তদন্ত চান না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন সিব্বল। ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা স্পষ্ট যে অপরাধীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে পুলিশ। এর পরেও আমরা রাজ্য সরকারের উপরে কী ভাবে ভরসা রাখব? ‘আমরা এমন একটা বিষয়ের বিচার করছি, যা অভূতপূর্ব, নৃশংস, সাম্প্রদায়িক। মণিপুরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর ৬ হাজার এফআইআর হয়েছে। তার মধ্যে কতগুলো অপরাধ নারীঘটিত?’ এর উত্তর দিতে পারেনি মোদী সরকার। কেন্দ্রের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, সরকার অসমে বিষয়টি স্থানান্তর করতে চায়। আদালত যেখানে বলবে, সেখানেই তদন্ত চলতে পারে বলেও জানান তিনি।

মোদী সরকারকে দেওয়া শীর্ষ আদালতের ৬ দফা নির্দেশ, একনজরে

  • ১) কোন অভিযোগ কী ধরনের, তার ব্রেক আপ দিতে হবে।
  • ২) কতগুলি জিরো এফআইআর (যে কোনও থানায় অন্য এলাকার অভিযোগ জানানোর সুবিধা হয়েছে জানাতে হবে।
  • ৩) কতগুলি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে, তার তালিকা।
  • ৪) এখন পর্যন্ত কত গ্রেপ্তার, তার হিসেব।
  • ৫) ধৃত অভিযুক্তদের আইনি সহায়তা সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ
  • ৬) ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কত অভিযোগকারীর বয়ান রেকর্ড হয়েছ, তার তালিকা।

সব উত্তর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ আদালতের ভাষায়, ‘এই হিংসার সঙ্গে সিস্টেম জড়িত।’ পুলিসই সেখানে কালপ্রিটদের সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্রকে বিচারপতির সরাসরি প্রশ্ন, ‘১৪ দিনে আপনারা কী করেছেন?’ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংও বলেন, ‘সিবিআইয়ের সামনেও যে নির্যাতিতারা সত্যি বলতে পারবেন, তার কী গ্যারান্টি আছে? তাঁদের সেই ভরসা জোগাতে হবে।’

প্রসঙ্গত, মণিপুর নিয়ে সাফাই দিতে সংসদের বাইরে ৩০ সেকেন্ড সময় বরাদ্দ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আর সেই বিবৃতিতে জুড়ে দিয়েছিলেন দুই বিরোধী রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের নাম। কিন্তু তাতে যে মণিপুরের অমানবিক ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যাবে না, সোমবার শীর্ষ আদালতের রায়ে সেই সত্যই প্রতিষ্ঠা করল বলে মনে করছে টিম ইন্ডিয়া।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#supreme court, #modi govt, #Manipur violence, #Manipur on fire, #Manipur Crisis

আরো দেখুন