শিলিগুড়ির শংকর ঘোষকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা করতে চলেছে বিজেপি?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বঙ্গ বিজেপি’র দিকে তাকেলেই দলের অন্দরে তিনটি গোষ্ঠীর অবস্থান টের পাওয়া যায়। এটা বোঝার জন্য খুব বড় রাজনৈতিক পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আর এই তিন গোষ্ঠীর মধ্যে সব সময়েই বিবাদ বেধেই রয়েছে। এই তিনটি গোষ্ঠী হল- দিলীপ গোষ্ঠী, সুকান্ত গোষ্ঠী ও শুভেন্দু গোষ্ঠী। আর এই তিন গোষ্ঠীকে সামলাতে সামলাতে নাজেহাল অবস্থা বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটনোর কথা ভাবছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলা থেকে কাদের নাম পাঠানো হবে তা নিয়ে ওই তিন গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে চাপানউতোর। বাংলায় বিজেপির ‘বিবাদমান তিন গোষ্ঠী’র সঙ্গে কথা বলেই ওই ফর্মূলা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা। রফা ফর্মূলায় ঢুকতে রাজি হননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নাড্ডাদের তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তিনপক্ষকে বুঝিয়ে ফর্মূলা চূড়ান্ত হলে মন্ত্রিসভায় কাদের নাম যাবে ও কারা বাদ পড়বেন সেটুকু আমায় জানিয়ে দিলেই হবে। আমি নামের তালিকা রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠিয়ে দেব।’ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির তিন গোষ্ঠীর নেতা, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীদের সঙ্গে কথা বলে নাড্ডাদের পক্ষে জোড়াতালির ফর্মূলা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি বলে বিজেপি সূত্রের খবর। দলের তরফে বাংলার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল ও সহকারী পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডেকে ফর্মূলা নিয়ে তিন গোষ্ঠীর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন নাড্ডা।
পঞ্চায়েত ভোটে দলের শোচনীয় ফলের জেরে ক্ষুব্ধ দিল্লীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বঙ্গ বিজেপিতে বড়মাপের রদবদল করতে চলেছেন। সবদিক বিবেচনা করেই শাহ-নাড্ডারা তিন গোষ্ঠীর তিন নেতাকে পৃথকভাবে নতুন তিনটি পদ দিতে চাইছেন। এখন তা নিয়েই চলছে নানা ধরনের জল্পনা।
ঠিক কী ফর্মূলা ছকা হয়েছে? অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ জেলায় বিজেপির শক্তঘাঁটি। যদিও এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তেমন বড় কোনও সাফল্য দেখা যায়নি। তবু বিরোধী দলনেতা পদটি শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষকে দিতে সহমত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আর তাই শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি করতে চান জেপি নড্ডা। সেটা আবার চান না বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারী। কারণ, যদি কোনও কারণে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে হারে বিজেপি তাহলে বঙ্গ–বিজেপির রাজ্য সভাপতি থাকার কোনও মূল্য থাকবে না। তার চেয়ে বিরোধী দলনেতা পদ অনেক ভাল। কারণ এটি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমতুল্য পদ।
তাহলে দিলীপ–সুকান্তর কী হবে? বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে খসড়া তৈরি করেছেন তাতে সুকান্ত মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে দেওয়া হবে। তাঁরা দু’জনেই সাংসদ। আবার সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গ থেকে সাংসদ হয়েছেন। দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুরের সাংসদ। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ছক কষা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে যে দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সরিয়ে এটা করা হচ্ছে তাঁরা ইতিমধ্যেই খবর পেয়ে গিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের জেলা থেকে মন্ত্রী হওয়া জন বারলাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। পরিবর্তে আসবেন সুকান্ত–দিলীপ।