১৩৮ বছরের সাবেকি রীতিতে আজও পুজো হয় মনোহলি জমিদার বাড়িতে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি মনোহলি জমিদার বাড়ি। কাটোয়ার সিন্নি গ্রাম থেকে এসে তারাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায় মনোহলি জমিদারবাড়ি পত্তন করেছিলেন। তিনি শুধু জমিদারি পত্তন করেন নি। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জমিদারবাড়িতে দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন। যা অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বনেদি বাড়ির পূজো গুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি পুজোর জন্য দালান মন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন।
শোনা যায়, রাজমহলের পাথর চুন-সুরকি দিয়ে মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল ।বিল্ডিং এর ছাদ লোহার পাটাতনের উপর ঢালাই দেওয়া । জমিদারি নেই, কিন্তু পুজা এখনও চলেছে। বংশের অধিকাংশ শরিক কর্মসূত্রে গ্রাম ছেড়ে বাইরে থাকেন। বর্তমানে পুজোর জৌলুস কমলেও রীতি নিষ্ঠার এতটুকুও ঘাটতি হয় নি। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক পুজো ২০১২ সাল থেকে বারোয়ারি পুজোয় রূপ নিয়েছে। জমিদার বাড়ির পুরনো ভগ্নপ্রায় মন্দিরে আর পুজো হয় না। জমিদারের জমিতে এখন তৈরি হয়েছে স্থায়ী দুর্গা মন্দির। পুজোর ৫ দিন মহাসমারোহে মহাভোজ হয়, সেই সঙ্গে মন্দির চত্বরে বসে মেলাও। দেবীর প্রতিমা হয় সাবেকি। এখন তান্ত্রিক মতে দেবীর পুজো হলেও দীর্ঘদিন থেকে বলি প্রথা উঠে গিয়েছে। পুজোর দিনগুলোতে দেবী দুর্গাকে পঞ্চব্যাঞ্জনে অন্নভোগ দেওয়া হয়।
জমিদারের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিদার তারাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে রমেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও যোগেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দুর্গাপুজার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কালের নিয়মে বর্তমানে এই জমিদার বাড়ি ও ঠাকুর দালানের ভগ্নপ্রায় অবস্থা। তবে বর্তমানে বংশের সমস্ত শরিক পুজোয় সেভাবে অংশগ্রহণ করে না। গ্রামবাসীরা এখন এই জমিদার বাড়ির পুজোকে সর্বজনীন পুজো কমিটি তৈরি করে চিরাচরিত রীতি ও প্রথা অনুযায়ী উদযাপন করেন।
সকলের মঙ্গলার্থে গ্রামবাসীরা এখনও দুর্গাপুজো করে আসছে। পুজোর দিন জমিদার বাড়ির সকল শরিকদের আমন্ত্রণ করা হয়। গ্রামের সকলে চাঁদা তুলে এই পুজো করেন। জনশ্রুতি, জমিদার আমলে তপন এলাকার আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ এই পুজো দেখতে আসতেন। তারা পুজোতে অংশগ্রহণ করতেন। সেই সময়ে জমিদার বাড়ি থেকে গ্রামের মানুষজনদের মেলা দেখতে টাকা দেওয়া হতো। বর্তমানে পরিচর্যার অভাবে এই জমিদার বাড়ি ভগ্নপ্রায়। তবুও এই জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে মানুষজনের উৎসাহ ও উন্মাদনার একটুও ভাঁটা পড়েনি।