বাদল অধিবেশন শেষের আগে মণিপুর ইস্যুতে রাজ্যসভায় আলোচনার জন্য মরিয়া ‘INDIA’ জোট
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে ২০ জুলাই থেকে। অধিবেশ শেষ হতে চললেও এখনও পর্যন্ত মণিপুর নিয়ে রাজ্যসভায় কোনও রকম আলোচনা হয়নি। বিরোধীরা প্রথমদিন থেকে সংসদে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যসভায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার এক ‘মধ্যপন্থা’র প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং প্রহ্লাদ জোশীকে।
শুক্রবার সকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে কংগ্রেস সভাপতি এবং রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের ঘরে বিরোধী দলগুলির একটি বৈঠক হয়। সেখানে INDIA জোটের প্রতিনিধিদের থেকে দাবি ওঠে প্রধানমন্ত্রীর সংসদে এসে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করে তাঁর দায়িত্ব পালন করা উচিত।
রাজ্যসভার সমস্ত কাজ মুলতুবি রেখে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করার যে দাবি (২৬৭ ধারায়) বিরোধীরা লাগাতার করে এসেছেন, তা মেনে নিচ্ছে না কেন্দ্র। কিন্তু সরকার যে স্বল্পমেয়াদী আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে,তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে মণিপুরের উপর একটি প্রস্তাব এনে দিনভর আলোচনার (১৬৭ ধারায়) নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’।
পীযূষ জানিয়েছেন, তিনি ‘নীতিগতভাবে’ এই প্রস্তাবে সম্মত। তৃণামূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘সরকার পক্ষের কাছে আবেদন করছি, রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সূত্র খোঁজা হোক। এ ক্ষেত্রে কোনও ঔদ্ধত্য আমরা দেখাতে চাই না।’ জয়রাম রমেশ বৃহস্পতিবার দুপুরে টুইট করে বলেন, ‘রাজ্যসভার অচলাবস্থা কাটাতে ইন্ডিয়া জোট রাজ্যসভার নেতাকে মধ্যপন্থার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা চাই, কোনও বাধা ছাড়াই মণিপুর নিয়ে আলোচনা হোক। আশা করছি মোদী সরকার এতে রাজি হবে।’
প্রথম থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দাবি ছিল, মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে। বিরোধীরা দুটি দাবি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পেশ করেছিল। তাদের একটি দাবি হল, প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, সংসদের কাজ পরিচালনা বিধির ২৬৭ নম্বর ধারায় বিতর্কের সুযোগ দিতে হবে। এই ধারায় লোকসভায় স্পিকার এবং রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান সরকার পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অন্য সমস্ত বিষয়ে স্থগিত রেখে জরুরি বিষয়ে আলোচনায় সম্মতি দিতে পারে। কিন্তু বিরোধীদের এই দ্বিতীয় দাবিও সরকার পক্ষ মানতে চায়নি।
বৃহস্পতিবার ২৬টি বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক হয় কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের ঘরে। সেখানে বিরোধীদলগুলির কয়েকজন সাংসদ প্রস্তাব দেন ১৬৭ নম্বর ধারায় আলোচনার সরকারি প্রস্তাব মেনে নিয়ে মণিপুর নিয়ে বিতর্ক শুরু হোক। তবে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে।
বিরোধীরা দু’টি উদাহরণ সামনে নিয়ে এসেছেন। ২০০২ সালে এই ১৬৭ ধারাতেই গুজরাত দাঙ্গার পর দিনভর আলোচনা হয়, তাতে অংশ নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। এই প্রস্তাবটি এনেছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ অর্জুন সিংহ। অংশ নিয়েছিলেন মনমোহন সিংহও। ২০১০ সালে ইউপিএ জমানায় একই ধারায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রস্তাব এনেছিলেন অরুণ জেটলি, তার পরে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
মধ্যপন্থার যে প্রস্তাব দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট, সেখানে বলা হয়েছে রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই। সে ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা সরকার পক্ষের অন্য কেউ বক্তব্য রাখতে পারেন। কিন্তু অন্তত বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে রাজ্যসভায় মণিপুরের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হোক।