দেশ বিভাগে ফিরে যান

হিংসাদীর্ণ হরিয়ানায়ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যোগীর বুলডোজার নীতি! গৃহহীন কয়েক হাজার মানুষ

August 5, 2023 | 2 min read

ছবি সৌজন্যে: PTI

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিজেপি শাসিত হরিয়ানা রাজ্যে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। হিংসকবলিত এলাকা নুহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ‘বেআইনি ঝুপড়ি’ উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। সেই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বুলডোজার।

নুহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসন ২৫০টির বেশি ঝুপড়ি ভেঙে দিয়েছে। গৃহহীন কয়েক হাজার মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। জেলা পুলিশের দাবি, এসব ঝুপড়ি অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বসবাসকারীরা অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে চলে আসা মানুষ। নুহ ও গুরুগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাঁরাই ধর্মীয় শোভাযাত্রাকারীদের ওপর ইটবৃষ্টি করেছিলেন।

হরিয়ানার নুহ ও পার্শ্ববর্তী জেলা গুরুগ্রামে ছড়িয়ে পড়া হিংসাত্মক ঘটনায় মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সেই ঘটনার জেরে শুক্রবার গুরুগ্রামের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ পড়া হয়নি। এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়, মসজিদ বা কোনো খোলা প্রান্তরে নামাজ না পড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যেন বাড়িতেই নামাজ আদায় করেন।

বেআইনি উচ্ছেদ ভাঙতে বুলডোজার সংস্কৃতি আমদানির কৃতিত্ব উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের! মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দুষ্কৃতকারী দমনে তিনিই প্রথম বুলডোজার ব্যবহার শুরু করেন। সিএএ ও এনআরসিবিরোধী বিক্ষোভ দাঙ্গার রূপ নেওয়ায় তিনি ব্রিটিশ আমলের ‘পিটুনি কর’ও রাজ্যে চালু করেছিলেন। যেসব দুষ্কৃতকারী ফেরার, তাঁদের তৈরি ঘরবাড়ি ভেঙে দিতে তিনি বুলডোজার চালানোর নির্দেশ দেন। প্রশাসনের যুক্তি, তাঁরা বেআইনি নির্মাণ ভাঙছে। ক্রমশই একের পর এক বিজেপিশাসিত রাজ্যও ওই বুলডোজার নীতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

হরিয়ানার নুহ ও তাউরুতে যেসব ‘অবৈধ স্থাপনা’ ভাঙা হয়, পুলিশের দাবি সেগুলো তিন বছর ধরে গড়ে উঠেছিল। প্রশ্ন উঠছে, এত বছর প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয়নি? কেনইবা সংঘর্ষের পর তাঁরা সক্রিয়? এবং কেনইবা শুধু সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা?
যাঁদের ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে প্রচারের মধ্য দিয়ে উত্তেজনা ছড়াল, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি। রাজস্থান পুলিশের কাছে ‘ফেরার’ মনু মানেসরকেও হরিয়ানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। অথচ ওই ব্যক্তির ভিডিওই উত্তেজনা ছড়িয়েছে ও হিংসায় প্ররোচনা দিয়েছে বলে অভিযোগ।

দিল্লির লাগোয়া গুরুগ্রামেও এই উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে। তবে সেখানে বুলডোজার ব্যবহারের খবর এখনো নেই। গুরুগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার সংখ্যালঘু ঝুপড়িবাসীদের স্থানীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ‘নির্দেশ’ মেনে কয়েক শ পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। তাঁদের অধিকাংশ গুরুগ্রামের অভিজাত হাউজিং সোসাইটিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুরুষেরা নানা রকম পেশায় যুক্ত থাকলেও নারীরা বেশির ভাগই সম্ভ্রান্ত পরিবারে গৃহকর্মের সঙ্গে যুক্ত।

এই ঘটনা ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলে টুইট করে এই ক্ষোভের কথা জানান। তিনি লেখেন, ‘গুরুগ্রাম এবং নুহতে যে ঘটনা ঘটেছে তার খবর পেয়ে এবং ছবি দেখে আমি মর্মাহত। প্রধানত ভিন রাজ্য থেকে আসা মুসলিম শ্রমিকদের ঝুপড়িই ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এবং এদের মধ্যে একটা বড় অংশের মানুষ বাংলার। এমন ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পরিযায়ী ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষগুলির নিরাপত্তার দাবি করছি। এবং পুলিশকে অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্য বস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Haryana, #Haryana violence

আরো দেখুন