বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

কবিগুরুর জীবনের শেষ কয়েকদিন কী ঘটেছিল – জেনে নিন

August 8, 2023 | 3 min read

কবিগুরুর জীবনের শেষ কয়েকদিন কী ঘটেছিল

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে প্রয়াত হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর জীবনের প্রায় এক শেষ বছর সময় কেটেছিল রোগশয্যায়।

ওই সময়ে ঠিক কী কী ঘটেছিল তা বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন কবির আত্মীয়-বন্ধুরা।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কবির অপারেশন হয়েছিল ১৯৪১ সালের জুলাইয়ের শেষে। ১৯৩৭ সালে একবার কিডনির সমস্যায় ভোগেন তিনি । তার আগে পর্যন্ত কবি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন।

বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের অধ্যক্ষ ও সাহিত্যিক রামকুমার মুখোপাধ্যায় লিখে গেছেন ১৯৪০ সালের ঘটনা। “শান্তিনিকেতন থেকে সে বছরের ১৯শে সেপ্টেম্বর পূত্রবধূ প্রতিমা দেবীর কাছে গিয়েছিলেন দার্জিলিং পাহাড়ের কালিম্পং-এ। সেখানেই ২৬ তারিখ রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি। দার্জিলিংয়ের সিভিল সার্জন বলেছিলেন তখনই অপারেশন না করলে কবিকে বাঁচানো যাবে না। প্রতিমা দেবী এবং মৈত্রেয়ী দেবী তখনই অপারেশন না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।” একটু সুস্থ হওয়ার পরে কবিকে পাহাড় থেকে কলকাতায় নামিয়ে আনা হয়। তারপরে তিনি ফিরে যান শান্তিনিকেতনে। অপারেশন করানো হবে কী না, তা নিয়ে যে একটা দোলাচল ছিল।

চিকিৎসক শ্যামল চক্রবর্তী লিখে গেছেন, “সেই ১৯১৬ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসা করছিলেন যে কিংবদন্তী ডাক্তার নীলরতন সরকার, তিনি কখনই কবির অপারেশন করানোর পক্ষে ছিলেন না। কবি নিজেও চাননি অস্ত্রোপচার করাতে। ডা. সরকার যখন স্ত্রী বিয়োগের পরে গিরিডিতে চলে গেছেন, সেই সময়ে আরেক বিখ্যাত চিকিৎসক বিধান চন্দ্র রায় শান্তিনিকেতনে গিয়ে অপারেশন করিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়ে দেন।”

“রাণী চন্দের ‘গুরুদেব’ বইটিতে লেখা আছে, কবিকে বলা হয়েছিল ছোট্ট একটা অপারেশন; এটা করিয়ে নিলেই তাঁর আচ্ছন্নভাবটা ঠিক হয়ে যাবে, পরের দশ বছর আবার আগের মতোই লিখতে পারবেন। নীলরতন সরকারকে একবার জানানোও হয়নি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত।পেনিসিলিনবিহীন যুগে ওই অপারেশনের ফল যে খারাপ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী ছিল, সেটা একবারও বলা হয়নি কবি বা তাঁর পরিবারকে। ওইভাবে অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ভাল করে না বুঝিয়ে সম্মতি আদায় করাটা মেডিক্যাল এথিক্স বিরোধী,” জানান চিকিৎসক শ্যামল চক্রবর্তী।

রবীন্দ্র গবেষক রামকুমার মুখোপাধ্যায় বলছেন, এই অসুস্থতার মধ্যেও কবির সৃষ্টি কিন্তু বন্ধ হয়নি। “এই সময়ে তাঁর সৃষ্টিশীলতা একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। মৃত্যুটাকে মানুষ কীভাবে দেখে, সেই দর্শন প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর ‘রোগশয্যায়’, ‘আরোগ্য’ এবং ‘জন্মদিনে’ এইসব রচনার মাধ্যমে। শেষ একবছরে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-ভাবনার আরও তথ্য পাওয়া যায় প্রতিমা দেবীর ‘নির্বান’ এবং নির্মল কুমারী মহলানবীশের ‘২২শে শ্রাবণ’-এ।”

জন্মদিন পালিত হওয়ার কিছুদিন পরেই সাধের শান্তিনিকেতন থেকে শেষবারের মতো রওনা হন রবীন্দ্রনাথ। আধশোয়া অবস্থায় তাঁকে নামিয়ে আনা হয় বাসভবন থেকে। চারপাশে তাঁর প্রিয় আশ্রমিকেরা। বোলপুর স্টেশনে তখন অপেক্ষায় ছিল একটি বিশেষ ট্রেন।

অধ্যাপক সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী বলছিলেন, “রবীন্দ্রনাথের শেষ সময়টা কীভাবে কেটেছিল, গবেষকদের কাছে তা হয়তো নতুন নয় কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এই তথ্যের অনেকটাই প্রায় অজানা।”

সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী জানান, “আমাদের কাছে প্রস্টেট ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকরা সম্প্রতি প্রমাণ পেশ করেছেন যে রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ দিকে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রস্টেট ক্যান্সারে। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা সাধারণ মানুষের কাছে জানানো জরুরী ছিল। তবে এ নিয়ে বিতর্ক বা গবেষণা চলতেই পারে।”

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বারান্দায় রীতিমতো একটা অপারেশন থিয়েটার বানানো হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের জন্য। সেই যুগেও যে জীবানুমুক্ত করে বাড়িতে অপারেশন করা হয়েছিল।

“অপারেশনের পরে ধীরে ধীরে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, জ্ঞান নেই তাঁর। সকলেই যখন বুঝতে পারছে কী ঘটতে চলেছে, তখনই গিরিডি থেকে খবর দিয়ে আনানো হয় কবির সুহৃদ ও বিশিষ্ট চিকিৎসক নীলরতন সরকারকে। তিনি এসে নাড়ি দেখলেন, পরম মমতায় কপালে হাত বুলিয়ে দিলেন, তারপরে উঠে দাঁড়ালেন। হেঁটে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে ডা. সরকারের দু’চোখে ছিল জল,” বলছিলেন গবেষক শ্যামল চক্রবর্তী।

কবির অবস্থার তখন দ্রুত অবনতি ঘটছে – ৫ ও ৬ অগাস্টের দিনপঞ্জিতে লেখা আছে সেই দিনের ঘটনা পরম্পরা।

১৯৪১ সালের ২২শে শ্রাবণ। “বেলা ন’টায় দেওয়া হল অক্সিজেন। শেষবারের মতো দেখে গেলেন বিধান রায় ও ললিত বন্দ্যোপাধ্যায়। কানের কাছে অবিরাম পড়া হচ্ছিল তাঁর জীবনের বীজমন্ত্র ‘শান্তম, শিবম্, অদ্বৈত্যম’। খুলে দেওয়া হল অক্সিজেনের নল। ধীরে ধীরে কমে এল পায়ের উষ্ণতা, তারপরে একসময়ে থেমে গেল হৃদয়ের স্পন্দন। ঘড়িতে তখন বাজে ১২টা ১০ মিনিট।

শেষমুহুর্ত উপস্থিত হওয়ার আগেই জোড়াসাঁকোতে হাজির হাজারে হাজারে মানুষ। একদিকে যখন ভেঙ্গে পড়েছেন তাঁর আত্মীয়, বন্ধু, ঘনিষ্ঠরা, তেমনই বাইরে তখন আবেগে উদ্বেল সাধারণ মানুষ। কবিকে কীভাবে শেষযাত্রার জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রদর্শণীর একটি প্যানেলে আছে সে কথাও।

তথ্য সৌজন্য: বিবিসি

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Rabindranath Tagore, #death anniversary, #Kobiguru, #22 shraban

আরো দেখুন