লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপি’র সেই অন্তর্কলহ নিয়েই চিন্তায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, শনিবার রাজ্যে নাড্ডা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা নির্বাচনের আগে পূর্বাঞ্চলে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে আসরে নেমে পড়েছেন জেপি নাড্ডারা। শনিবার থেকে বিজেপি’র পূর্ব ক্ষেত্রের কর্মশালা শুরু হবে। দু’দিনের এই কর্মশালায় নাড্ডা উপস্থিত থাকবেন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করা কথা প্রধামনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের। বিজেপির পূর্ব ক্ষেত্রের মধ্যে বাংলা ছাড়াও রয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, আন্দামান ও নিকোবর, অসম, ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের সব রাজ্য।
সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ৩১ জন জেলা পরিষদে জিতেছেন। সেই ৩১ জন-সহ রাজ্যের জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন স্বশাসিত প্রশাসনিক সংস্থার মোট ১৩৪ জন সদস্য নড্ডার বৈঠকে ডাক পাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। শনি ও রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে হতে পারে পঞ্চায়েত কর্মশালা, বিজেপি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
যখন বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে মরিয়া, তখন বঙ্গ বিজেপিতে গোষ্ঠী কোন্দল অব্যাহত। গত সোমবার বিজেপির ১১ টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হয়েছে। তার পর থেকে বঙ্গ বিজেপিতে অন্তর্কলহ চরমে উঠেছে। নয়া জেলা সভাপতিদের তালিকা প্রকাশের পর যা নজরে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন জেলার কর্মীরা। রাজ্য নেতাদের বড় অংশের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
যেমন, রদবদলে মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব বর্তেছে নবেন্দু নস্করের ওপর। আন্দোলনকারীদের দাবি, নবেন্দু তৃণমূলের চর। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিট না পেয়ে কুলপি ব্লকের গাজিপুর থেকে বিজেপি প্রার্থী অরুণ নস্করের বিরুদ্ধে ভোটে লড়াই করেছেন তিনি। এই ব্যক্তিকে কোনও ভাবেই তাঁরা জেলা সভাপতি হিসাবে মেনে নেবেন না বলে বিধাননগর সেক্টর ফাইভে বিজেপি দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের দাবি, অন্য কাউকে জেলা সভাপতি নিয়োগ করতে হবে। দায়িত্বে থাকলে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের কাছে দল বিক্রি করে দেবে নবেন্দু নস্কর।
বেশ কয়েকটি জেলায় সভাপতি বদল না করা নিয়ে আবার দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বীরভূমের জেলা সভাপতি বদল করার দাবি উঠেছিল। আবার হাওড়া গ্রামীণ থেকে শুরু করে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কেন বদল করা হল না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। এসব জেলায় পঞ্চায়েতে ফল ভাল হয়নি। তা সত্ত্বেও কেন বদল হল না তা নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলার কর্মীদের একাংশ। আবার কয়েকটি জায়গায় অপেক্ষাকৃত ভাল ফল হলেও সেখানে বদল করে দেওয়া হয়েছে সভাপতি।
আবার, শুভেন্দু অধিকারীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গাকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গেরুয়া শিবিরে। মনোজকে আলিপুরদুয়ার জেলায় দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়ায় পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক পদে কি বদল আনতে চলেছে বিজেপি। কারণ, বিজেপিতে সাধারণত এক ব্যক্তি, দুই পদ হয় না। তাহলে কি মনোজকে মুখ্য সচেতকের পদ থেকে সরিয়ে সংগঠনের কাজে ব্যবহার করতে চান সুকান্ত? তবে মনোজকে মুখ্যসচেতকের পদ থেকে সরানো হবে না বলে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে। বিধানসভায় পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতকের কাজ দায়িত্বের সঙ্গেই সামলাচ্ছেন মাদারিহাটের বিধায়ক তথা সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ মনোজ টিগ্গা। এখন প্রশ্ন, বিজেপির এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি কি মাদারিহাটের বিধায়কের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে?
বঙ্গ বিজেপি’র একাংশের মতে, নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এরাজ্যে বিজেপি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সেভাবে কিছু করতে পারছে না। প্রত্যেকেই নিজে নেতা হওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের কাছের লোকদের পদে বসাতে চাইছে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে দলকে। এই সমস্যা অবিলম্বে দূর করতে কেন্দ্রীয় নেতারা উদ্যোগী না হলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গে বিজেপি’র ভাল ফল করার আশা খুবই ক্ষীণ।