বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

১৫ই আগস্ট লাল কেল্লা থেকে কোন প্রধানমন্ত্রী কি ঘোষণা করেছিলেন? জেনে নিন

August 15, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: স্বাধীনতা দিবস মানেই গোটা দেশের কাছে এক আবেগঘন দিন। ১৯৪৭ সাল থেকে প্রতি বছর দেশজুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হয় স্বাধীনতা জয়ের এই দিন। ১৫ই আগস্ট মধ্যরাতে জহরলাল নেহরুর বক্তৃতা শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় সকলের। সেই থেকে যে একটি রীতি শুরু হয়েছে, তা বহাল আছে আজ অবধি। 

প্রত্যেক বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে দেশকে সম্বোধিত করেন। সেই ভাষণ শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে গোটা দেশ। চলুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক কোন প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে দেশের উদ্দেশ্যে কি বলেছেনঃ

জহরলাল নেহরু

উনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রায় দু’দশক। সেই সময়কালে দেশকে প্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার দিশা দিয়েছিলেন নেহরু। ছোট ছোট পদক্ষেপে ভারতের উন্নতির কথা বলেছিলেন। দেশভাগের ক্ষত মুছে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে ইন্দো-চীন যুদ্ধের ক্ষত থেকে ভারতের সেরে ওঠার কথা বলেছিলেন। কাশ্মীর সমস্যার কথাও দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন এই প্রধানমন্ত্রী।

ইন্দিরা গান্ধী

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ সবসময়ই গোছানো থাকত। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ছেদ পড়ে সেই রীতিতে। সেই বছরই জরুরী অবস্থা ঘোষণা হয়। অনেকে ভেবেছিলেন সেই প্রসঙ্গ থাকবে ওনার বক্তব্য জুড়ে। কিন্তু, সেদিনই ইন্দিরার কাছে খবর আসে শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। যে দেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি, সেই দেশের প্রধান নিহত। তাঁর সেদিনের বক্তৃতায় অনেকটা জুড়েই ছিল বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু।

১৯৮০ সালে ক্ষমতায় ফিরেছিলেন ইন্দিরা। ১৯৮৪ সালে লালকেল্লা থেকে তিনি বলেছিলেন অপারেশান ব্লুস্টারের কথা।

মোরারজি দেশাই

উনি দেশের প্রথম অ-কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী। জিতেছিলেন জরুরী অবস্থার পর এক ঐতিহাসিক নির্বাচনে। স্বভাবতই, ওনার বক্তব্যে স্থান পেয়েছিল জরুরী অবস্থার নৃশংসতা ও বংশানুক্রমিক রাজনীতির বিরুদ্ধে বজ্রনির্ঘোষ। উনি বলেছিলেন, ওনার সরকার জনতার সেবক, শাসক নয়।

চরণ সিং

১৯৭৯ সালের জুলাই মাস থেকে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাস অবধি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চরণ সিং। পাকিস্তানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভারতের জন্য চিন্তার বিষয় – নিজের বক্তব্যে এই সাবধান বাণী শুনিয়েছিলেন তিনি। উনি নিজে ছিলেন এক কৃষক নেতা। তাই নিজের বক্তব্যে কৃষকদের উন্নতি এবং শ্রম আইন সংস্কারের আহ্বান জানান চরণ সিংহ।

রাজীব গান্ধী

দেশকে আধুনিকতার নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন রাজীব। প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নয়নের কথা বলে জিতে নিয়েছিলেন জনতার মন। কম্পিউটার ব্যবহারে যথেষ্ট জোর দিয়েছিলেন তিনি। উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সাধারণ মানুষকে।

ভি পি সিংহ 

ওনার শাসনকাল ইতিহাসের পাতায় মন্ডল-কমণ্ডল যুগ বলেই অভিহিত করা হয়। তাই, অবশ্যম্ভাবী ছিল যে ১৫ই আগস্টের বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গ উঠবে। হয়েছেও তাই। মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট লাগু করার সরকারি সিদ্ধান্তকে লাল কেল্লা থেকে সমর্থন করেন তিনি। 

পি ভি নরসিংহ রাও 

খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। একদিকে অর্থনীতির দুরবস্থা, অন্যদিকে রাম মন্দির আন্দোলন। দুইয়ের মিশেলে কোনঠাসা সরকার। ১৯৯১ এর ভাষণে নরসিংহ রাও তাই দিয়েছিলেন উদার অর্থনীতির দিশা। অন্যদিকে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও দাঙ্গা থেকে বিরত থাকতে আবেদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীর ইস্যুতেও বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।

এইচ ডি দেবগৌড়া

হিন্দি জানতেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন, ভাষাটি তিনি শিখবেন এবং ১৫ই আগস্টে লাল কেল্লা থেকে বলবেন হিন্দি ভাষাতেই। শোনা যায় কন্নড় ভাষার লিপিতে লেখা হয় সেই হিন্দি বক্তৃতা। মূলত কৃষকদের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেন তাঁর বক্তৃতায়। কিন্তু, ভাষণের বিষয়বস্তুর চেয়ে বেশি আলোচ্য হয় ওনার হিন্দি বলা।

আই কে গুজরাল 

স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। নিজের বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ ঘোষণা করেন গুজরাল। প্রাথমিক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার করার কথাও বলেন তিনি। আর রাজনীতিতে মহিলাদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন।

অটল বিহারি বাজপেয়ী

লোকপাল থেকে পোখরান, মহিলা সংরক্ষণ থেকে পাকিস্তান – ওনার বক্তব্যে দেশের বিভিন্ন সমস্যার উল্লেখ ছিল। তাঁর বক্তৃতায় উঠে এসেছিল লাহোর বাসযাত্রা, কারগিল যুদ্ধের কথা। কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কথাও বারবার বলেন তিনি। ওনার বিখ্যাত উক্তি ছিল ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান’।

মনমোহন সিং

সকলেই জানেন মনমোহন সিংহ মিতভাষী। তাত্ত্বিক দিক থেকে গভীর হলেও সুবক্তা না হওয়ার ফলে দেশের জনমানসে প্রভাব ফেলেনি ওনার কোনও বক্তব্যই। তবুও উইপিএ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও সাফল্যের কথা বারংবার ওনার ভাষণে স্থান পেয়েছে।

নরেন্দ্র মোদী

চটকদারিতে ওনার জুড়ি মেলা ভার। তথ্যগত দিক থেকে হয়তো প্রচুর জল মেশানো হয়েছে ওনার ভাষণে। কিন্তু গত ৬ বছরে ১৫ই আগস্টের প্রত্যেকটি বক্তব্যে হেডলাইন করেছেন মোদী। স্বচ্ছতা থেকে দুর্নীতি, কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী,স্টার্ট আপে যুবশক্তি – নির্বাচনী রাজনীতির লক্ষ্যে মোদীর মাথায় রাজস্থানি পাগড়ি, ভাষণে উঠে এসেছে বিরোধী জোট INDIA-কে কটাক্ষ।

পুনশ্চঃ গুলজারি লাল নন্দ এবং চন্দ্রশেখর ১৫ই আগস্ট লাল কেল্লা থেকে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাননি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Independence Day, #prime ministers

আরো দেখুন