গরিবের ভাতার টাকায় চলছে মোদীর প্রচার? কী বলছে CAG রিপোর্ট?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিরোধীরা অভিযোগ করেন মোদী ও তাঁর দল প্রচার সর্বস্ব রাজনীতিতে পটু। বাস্তবে এ’কথা যে মিথ্যে নয়, তারও ঢের প্রমাণ মিলেছে বিগত এক দশকে। কীভাবে প্রচার করতে হয়, তা ভালই জানেন নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রচারের জন্য গরিব মানুষের ভাতা, পেনশনের টাকাকেও রেহাই দিচ্ছে না মোদী সরকার। ৮ আগস্ট দেশের শীর্ষ অডিট সংস্থা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল লোকসভায় পেশ করা রিপোর্টে এমনই তথ্য জানিয়েছে।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীদের পেনশন প্রকল্পের অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে ক্যাগ। ক্যাগ রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১, টানা পাঁচ অর্থ বছরে জাতীয় সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির টাকা অন্যান্য প্রকল্পের প্রচারের কাজে খরচ করেছে মোদীর গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, প্রবীণ, বিধবা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য পেনশন প্রকল্প এনএসএপির অন্তর্ভুক্ত। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এনএসএপির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে পেনশন বণ্টনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দের তিন শতাংশ প্রশাসনিক ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত থাকে। ক্যাগ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভাতা খাত থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা অন্য খাতে খরচ হয়েছে।
ক্যাগের দাবি, এনএসএপির আওতাধীন তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত ২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা অন্যান্য প্রকল্পের প্রচারের জন্য খরচ হয়েছে। এতে আদপে প্রকল্পগুলির সম্ভাব্য সুবিধা প্রাপকরা বঞ্চিত হয়েছে। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, গোয়া ও ওড়িশার মতো রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৫৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার তহবিল অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সব রাজ্যে, ওই সময় ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বিহারে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে রাজ্য এবং কেন্দ্রের প্রদেয় অর্থ অন্য খাতে ব্যয় হয়েছে। রাজস্থানে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ফ্যামিলি বেনিফিট প্রকল্পের অর্থ দিয়ে অন্য প্রকল্পের গ্রাহকদের জীবন বিমার প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে। ক্যাগ আরও জানিয়েছে, ২০১৭-র জানুয়ারিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক তাদের সমস্ত কর্মসূচি ও প্রকল্পের দেশব্যাপী প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির রাজধানী শহরে প্রচার চালানোর জন্য দু’দফায় প্রায় ৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করে মোদী সরকার। একশো দিনের কাজের তহবিল থেকে এই টাকা বরাদ্দের কথা থাকলেও, এনএসএপি তহবিল থেকে টাকা ব্যয় করা হয়।
পাশাপাশি ক্যাগ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যোগ্য সুবিধাপ্রাপকদের চিহ্নিত করা এবং পেনশন বরাদ্দে বিলম্ব করা হয়েছে। ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ ৪৩ কোটি টাকা কম পেনশন পেয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে পেনশন বরাদ্দ না হওয়ায়, ১১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৯২ হাজার ৬০২ জন পেনশনপ্রাপক ৬১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা পাননি। ৭০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ অযোগ্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।